বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎপাদক, পরিবেশক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের একছাতায় নিয়ে স্পেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক পত্রিকা মনেদা উনিকা (Moneda Única) আএমইএক্স মাদ্রিদ নামক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক ইভেন্ট আয়োজন করে আসছে ।

বুধবার তাদের ১৯তম এ মেলায় প্রথম বারের অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ।


৫ দিনব্যাপী এই আয়োজনে ৪দিন ভার্চুয়াল এবং ১দিন (১৬ জুন) সরাসরি মাদ্রিদের সিটি হল পালাসিও দে সিবেলেসে অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৫০টির অধিক দেশ এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করছে। গতকাল (১৬ জুন) মাদ্রিদের সিটি হল পালাসিও দে সিবেলেসে দিনব্যাপী সেমিনার, কনফারেন্স ও রাউন্ড টেবিল বৈঠক হয়। বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের এ ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়টি জানানোর জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে, এছাড়া দূতাবাসের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন চেম্বারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাস মাদ্রিদের কমার্শিয়াল উইং ১৬ জুন সরাসরি ইভেন্টে বাংলাদেশের জন্য একটি স্টল বরাদ্দ নেয়। এ স্টলে স্পেনে অবস্থিত আগ্রহী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সাথে সভা ও তথ্য প্রদান করা হয়েছে। সরাসরি এই ইভেন্টে বাংলাদেশকে নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে স্পেনিশ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশের শুধু গার্মেন্টস সেক্টর নয় অন্যান্য সেক্টরেও বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ,খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, জনশক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ উৎপাদনশীল খাতে স্পেনিশ ব্যবসায়ীদের আগ্রহ রয়েছে বলে জানান দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রেদোয়ান আহমেদ।

এ দিন বিকেল সাড়ে ৫ টায় বিজনেস এন্ড ইনভেসমেন্ট অপুর্চুনিটিজ ইন বাংলাদেশ (Business and Investment Opportunities in Bangladesh) শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যা একইসাথে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, যেখানে স্পেন ও বাংলাদেশ থেকেও অনেকেই দর্শক হিসেবে যোগ দেন। সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপনা করেন দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রেদোয়ান আহমেদ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করার পূর্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ। তিনি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার হিসেবে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক এর মন্তব্য গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অনেকগুলোর কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। পৃথিবীর অনেক দেশ এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে। কারণ এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। স্পেনসহ ইউরোপও এখানে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে।

দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রেদোয়ান আহমেদ বলেন, কোভিড পরবর্তী অবস্থায় মাদ্রিদে এটাই প্রথম বাণিজ্য সম্পর্কিত আয়োজন। আজকের এই সরাসরি আয়োজনে বাংলাদেশের অংশ নেয়ার কারণে বাংলাদেশে ব্যবসা বা বিনিয়োগে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য আগে থেকেই সাক্ষাতের তারিখ নিয়ে রেখেছে। এখানে অংশগ্রহণের কারণেই আমরা তাদের এ আগ্রহের বিষয়ে জানতে পেরেছি। তারা এতদিন বাংলাদেশকে শুধু তৈরী পোশাক উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে জেনে এসেছে। আমাদের একটি উদ্দেশ্য ছিল স্পেনিশ ব্যবসায়ীদের এ ধারণা পরিবর্তন করা। সেটা হয়ত একদিনে হবে না, তবে এটা শুরু বলা যেতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশের নাম লেখা দেখেই অনেকে এসেছে কথা বলতে। আজকের সেমিনারে আমরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অর্জনগুলো তুলে ধরেছি, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধাসমূহ তুলে ধরেছি, কেন বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় ভালো বিনিয়োগের গন্তব্য সেটাও তুলে ধরেছি। আমাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে স্পেনিশ ব্যবসায়ীদের কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা। সেটা আমরা করতে পেরেছি। বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, নিয়মিত এ ধরণের ইতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে স্পেনিশ ব্যবসায়ীদের কাছে আরও লোভনীয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত করাতে পারব।

সেমিনার শেষে বাংলাদেশস্থ স্পেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মিজ নুরিয়া লোপেজ বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের নানা ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন।

মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মেলায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের স্টল পরিদর্শন করেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ, দূতাবাসের দূতালয় প্রধান এটিএম আব্দুর রউফ মণ্ডল, প্রথম সচিব (শ্রম) মুতাসিমুল ইসলাম ও প্রথম সচিব তাহমিনা আরফিন শারমিন। এ ছাড়া ও স্পেন আওয়ামিলীগ এর সভাপতি এস আই রবিন, স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় আয়োজক আইএমইএক্স মাদ্রিদ ২০২১ কর্তৃপক্ষ মেলায় বাংলাদেশের সফল অংশগ্রহণ ও দূতাবাস থেকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশে দূতাবাসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এই মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং কমার্শিয়াল উইংয়ের ইতিবাচক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন আয়োজকবৃন্দ।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/কেএএম/এসডি-১