এবার ‘আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২০ পেলেন কথাসাহিত্যিক রণজিৎ সরকার। তিনি শিশুকিশোর বিভাবে কিশোর উপন্যাস ‘স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল’ বইয়ের জন্য এ পুরস্কার পান। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় অনলাইনে এই পুরস্কার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ এবং পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সংগীত পরিবেশন করেছেন অদিতি মহসিন।

কিশোর উপন্যাসে দেখা যায়- রায়না নামের এক প্রবাসী বাঙালি কিশোরীর বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন আর সম্ভাবনার অনেকান্ত কথায় মুখর রণজিৎ সরকারের স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামের একটা স্কুলে ক্যাম্প করে মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার করে - হত্যা করে বহু গ্রামবাসীকে। অবশেষে গ্রামে আসে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা - ধ্বংস করে পাকিস্তানি বাহিনী - স্কুলে উড়িয়ে দেয় বিজয় পতাকা। কৌতূহলোদ্দীপক এই গল্পাংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উপন্যাস। বক্ষ্যমাণ উপন্যাস কৌতূহলী শিশু-কিশোরদের বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে বিস্তার করবে সহযোগের হাত। রায়নার অবয়বে এখানে প্রতিভাসিত হয়েছে বাংলাদেশের অগণন শিশু-কিশোরের স্বপ্নরঙিন মুখচ্ছবি - তাদের স্বপ্ন আর সম্ভাবনার কথা। স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উপন্যাস বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের সদর্থক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে সঞ্চার করবে সহযোগ - এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।


পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতিতে রণজিৎ সরকার বলনে, আমি প্রতিদিন নিয়ম করে লেখালেখির চেষ্টা করি। আমার ৫২টি বই প্রকাশ হয়েছে। কোনো লেখক হয়তো পুরস্কার পাওয়ার জন্য লেখেন না। তবে হ্যাঁ কাজের স্বীকৃতি চায় প্রতিটি মানুষ। সেটি পেলে মন আনন্দে ভরে ওঠে। কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২০ আনন্দের অনুভূতির অনুভব দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরস্কারটি ঘোষণার পর মানুষের অনেক সাড়া পেয়ে বুঝলাম মানব জন্মের কখনো কখনো মনে হয় দ্বিতীয় জন্মও হয়।

পুরস্কার একজন লেখককে লেখার প্রতি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। আমারও বেড়ে গেল। এখন সম্মানিত বোধ করছি, খুবই অনুপ্রাণিত বোধ করছি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

রণজিৎ সরকার ছাড়াও এবার আর তিনজন পুরস্কার পেয়েছেন, কথাসাহিত্যে ‘তিমিরযাত্রা’ গ্রন্থের জন্য মোজাফ্ফর হোসেন, প্রবন্ধ-গবেষণায় ‘চলচ্চিত্রনামা’ গ্রন্থের জন্য মাসুদ পারভেজ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যে ‘১৯৭১: বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং’ গ্রন্থের জন্য ইজাজ আহমেদ মিলন।

রণজিৎ সরকার এ সময়ের জনপ্রিয় তরুণ কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম তিনি। রণজিৎ সরকারের জন্ম ১৯৮৪ সালের ১২ মে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে খোকশাহাট গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতৃভূমি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সরাইদহ গ্রামে।

বাবা নারায়ণ সরকার ও মা শোভা সরকারের তিন সানের মধ্যে তিনি একমাত্র পুত্র সন্তান। রণজিৎ সরকার হিসাববিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করলেও লেখালেখির নেশা থেকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। বর্তমানে তিনি ‘দৈনিক আমাদের সময়’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে ৬ বছর ধরে কর্মরত আছেন।

রণজিৎ সরকারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা ৫২ টি। উল্লেখ্যযোগ্য বইগুলো হলো- স্কুল ছুটির পর, স্কুল ছুটির দিনগুলি, মায়ের সাথে স্কুলে, শিশুতোষ মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ব, শিশুতোষ একুশের গল্প, ছোটদের মুক্তিযুদ্ধের অজানা গল্প, প্রেমহীন ক্যাম্পাস, ভাষাশহীদদের গল্প, বীরশ্রেষ্ঠদের গল্প, নায়িকার প্রেমে পড়েছি, পথে পাওয়া, গল্পে গল্পে জাতীয় চার নেতা, পরির সাথে দেশ ঘুরি, সূর্যশিকারি, ক্যাম্পাসের প্রিয়তমা, ভাষাশহিদ ও বীরশ্রেষ্ঠদের গল্প, গল্পে গল্পে বর্ণমালা, শিশুকিশোরদের বঙ্গবন্ধু, প্রেম জলে ডুবে যাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সুমনা, প্রেমভূমির নিমন্ত্রণলিপি, করোনাকালে ছুটির ঘণ্টা, মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডিজেএস-৯