মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে ইয়াস বিধ্বস্ত সুন্দরবন পৌঁছে গেল পশ্চিমবঙ্গের ‘ফ্যামিলি ওয়েল ফেয়ার গ্রুপ’।

সারা বছর রাত বিরাত আর্ত মানুষকে রক্ত দিতে সরাসরি পৌঁছে যায় এ গ্রুপ। এছাড়াও সামাজিক পরিসেবা তাদের নিত্য কর্ম। আর এই মহা দূর্যোগে সিদ্ধান্ত নেয় এক বেলা তারা মানুষকে পেট পুড়ে খাওয়াবে। এদিন তারা ১৯৩০ জন মানুষকে খাইয়েছে। টিম নিয়ে তারা আগের দিন ২৩ জুন যখন পৌঁছায় তখন আশেপাশের উৎসুক মুখ থেকে ভেসে আসছে আগামী কাল একবার পেট ভর্তি গরম ভাত মাংস খাবার পাব। পাস থেকে ভেসে আসা কথা গুলো হৃদয় স্পর্শ করলো তাদের। সত্যি ই তো আজ খাওয়ানোর দিবস। কজন জানে? কত দিবস আমরা পালন করি, যোগ দিবস, ফটো দিবস, পেট্রোল দিবস, কিন্তু গরীব মানুষকে নিয়ে কি কোনো দিবস আছে ? বিগত চার বছর ধরে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার গ্রুপ নামের এই ফেসবুক সংগঠন এই দিবস পালন করছে। এবং তারা লড়ছে শুধু এই জন্যেই যাতে ভারত তথা পৃথিবীতে নেমে আসে এই দিবস। যাতে অন্তত একদিন সব অভুক্তর পাতে খাবার থাকে। এবং তারা ভরা পেটে ঘুমোতে পারে।


সংগঠনের এক্টিভ সদস্য ডি আই জি কারা নবীন কুমার সাহা বলেন, নিজেরা যদি দুবেলা খাবার না খান, পেটের টান বোঝা যায়। খিদেটা কী ? তাই এই দিবস পালন হোক ভারত তথা এই পৃথিবীর বুকে। এই দিনটি পালন করার জন্যেই ফ্যামিলি গ্ৰুপটি সুন্দরবনের বন্যা বিধ্বস্ত মৌসুনি দ্বীপে শিশু সহ প্রায় দুই হাজার জনকে পেট ভর্তি মাংস ভাত খাওয়ায়। খাবার পাতে ছিল ডাল ভাত, পোস্ত, আলুভাজা, পটল, চিংড়ি, মুরগির মাংস, চাটনি, মিষ্টি, জলের বোতল ও জোয়ানের প্যাকেট। এছাড়াও বিনামূল্যে সাস্থ্য শিবির আয়োজন করা হয়। সুগার পেসার সহ সাধারণ পরীক্ষা নিরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয় প্রায় চারশো সত্তর জন মানুষকে। অপুষ্টিতে ভোগা একশো চোদ্দ জন শিশুকে খাদ্য প্রদান করেন তারা। এছাড়া চাল, ডাল, নুন, তেল, ছোলা, গুর, মাস্ক, মোমবাতি, স্যানিটারি ন্যাপকিন, চকলেট, বিস্কুট, চিরে, মুড়ি ইত্যাদি ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয় প্রায় পাঁচশ অসহায় মানুষকে। গ্রামে ঘুরে ঘুরে যাদের বন্যায় বাড়ি ঘর সত্যই ভেঙে গেছে, সর্বস্ব হারিয়েছে তাদেরকে ত্রাণ সামগ্রী ছাড়াও তুলে দেওয়া হয় ৩০/৩০ ফুটের ট্রিপল। গ্রামের প্রধান ও গ্ৰামবাসি বলেন এই মৌসুনিতে অনেক মানুষ ত্রাণ দিতে আসেন, কিন্তু কোনো সংগঠনকে দেখেননি এত সুশৃঙ্খল ভাবে, এত মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। সমস্ত দিক খেয়াল করে সাস্থ্য শিবির, খাওয়ানো, এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এত কিছু কেউ কোনোদিন করেননি।

ফ্যামিলি গ্রুপের কর্ণধার তন্বী মুহুরী বলেন, একদিন দেখবেন নিশ্চই দোকানে দোকানে ক্রিসমাস স্পেশাল কেকে যেমন বিক্রি হয়, আমার আপনার লড়াই একদিন ফীড ডে ও পালিত হবেই।

সংগঠনের আরেক কর্নধার রাজা ব্যানার্জী বলেন, "যাদের পাতে ফোরায় পান্তা, আনতে গিয়ে নুন, তাদের জন্যে খাওয়ার দিবস হলো চব্বিসে জুন।"

এই মহান কর্মসূচিতে কলকাতা সাঁতরাগাছি হাওড়ার প্রখ্যাত কবি দিলীপ পালের সহযোগিতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার গ্রুপের এই পূণ্য কর্মের জন্য বরাক উপত্যকা সর্বধর্ম সমন্বয় সভার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আমির হোসেন গ্রুপের কর্মকর্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এএএএইচ/এসডি-১