বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম সেরা দল ইতালি। রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর বিখ্যাত ফুটবলারের উর্বরভূমি। চারবার হয়েছে বিশ্ব সেরা, দুইবার রানার্স আপ। অথচ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চে মাত্র একবার শিরোপার স্বাদ পেয়েছে আজ্জুরিরা, সেই ১৯৬৮ সালে। এরপর দুইবার হয়েছে রানার্সআপ। সবশেষ ২০১২ সালে। ফাইনালে স্পেনের সাথে হেরেছিল বুফন-কিয়েল্লিনি-বুনোচ্চি-ডি রসিরা। এবার শিরোপা ডাবল করার সুবর্ণ সুযোগ। অপ্রতিরোধ্য ইতালি সেমি-ফাইনালে ওঠার পর সেই স্বপ্ন দেখতেই পারেন কোচ মানচিনি। কারন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ সুযোগ না পাওয়া দলটির আছে দারুণ সব খেলোয়াড় এবং দুর্দান্ত টিম স্পিরিট।

ঐতিহ্যগতভাবে ইতালি কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর দল হলেও মানচিনির কোচিংয়ে তারা নজর কেড়েছে আধুনিক ও আগ্রাসী ফুটবল খেলে। দারুণ কার্যকরও হচ্ছে এই কৌশল। যেনো রূপকথার গল্পকেও হার মানাচ্ছে তারা। নিজেদের ইতিহাসে রেকর্ড অপরাজেয় যাত্রায় আছে আজ্জুরিরা, টানা ১৩ ম্যাচ জয়ের সাথে ৩২ ম্যাচ অপরাজিত। এই টুর্নামেন্টেও পাঁচ ম্যাচে করে ফেলেছে ১১ গোল। দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় অধিনায়ক জর্জিও কিয়েল্লিনি আর বুনোচ্চির ডিফেন্ডিং ইতোমধ্যে বিশ্ব সেরার খেতাব পেয়েছে। ক্যানভারো, নেস্তা কিম্বা মালদিনির পর আজ্জুরিদের সবচেয়ে ভরসাস্থল এই দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়।


২০১৮ সালে বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়ার দায় কাঁধে নিয়ে অবসর নিয়েছিলেন দুজন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর এই দু'জনকেই ফিরিয়ে আনেন মানচিনি। বিশ্বাস ছিলো তারুন্যনির্ভর ইতালির ঐতিহ্যের ডিফেন্ডে কিয়েল্লিনি আর বুনোচ্চির বিকল্প নেই। সেই মর্যাদা এখনো রাখছে তারা। তাদের বাঁধা টপকে গত ১৩ ম্যাচের মধ্যে ১১ ম্যাচেই গোল দিতে পারেনি কেউ, শেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রিয়ার সাথে ২-০ তে এগিয়ে থেকে শেষ মুহূর্তে এবং বেলজিয়ামের সাথে পেনাল্টিতে বুফনের প্রতিচ্ছবি গোলরক্ষক ডোনারোমাকে ফাঁকি দেয় বল।

তবে নান্দনিক ফুটবল খেলে ইতোমধ্যে বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের মন জয় করেছে মানচিনির শিষ্যরা। শেষ ম্যাচে দারুন খেলে বিশ্বের শীর্ষ দল বেলজিয়ামকে ২-১ গোলে হারায় চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তরুন স্ট্রাইকার ইনসিনিয়ের গোল ছিল দৃস্টিনন্দন। দুর্দান্ত আক্রমনের সাথে কৌশলী ডিফেন্ডিং ছিল। এতেই প্রমানিত মানচিনির হাত ধরে ইতালি যেনো ক্রমেই অজেয়, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে।

সেমিতে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী স্পেন বলেই নিজেদের চেনা পথ বদলাতে চাননা অভিজ্ঞ এই কোচ।

যদিও স্পেনের সাথে অতীত রেকর্ড আজ্জুরিদের পক্ষে নয়। ৩৩ ম্যাচের বিপরীতে জয় মাত্র ৯টি, হার ১২ এবং সমান সমান ১২টি ম্যাচের ফল, সর্বশেষ দেখায় ০-৩ গোলে হেরেছিল ইতালি।

তবে সাম্প্রতিক ছন্দ বিবেচনায় নিশ্চিতভাবে আসরের শিরোপার বড় দাবিদার কিয়েল্লিনি, বুনোচ্চি, ইনসিয়েনরা। একের পর এক ম্যাচ জিতে রেকর্ডের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। মঙ্গলবার রাতে সাবেক বিশ্ব ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন দলের আলবা-তোরেস-মোরতাদের সাথে কঠিন লড়াই হবে বেরেল্লা-লুকাতল্লী-চিয়েসাদের। ফাইনালে উঠার পথে ইতালি-স্পেনের লড়াইয়ে হতে পারে এক ক্লাসিক ম্যাচ। আর সেখানে ইতালি না জিতলে অবাকই হবে ফুটবল বিশ্ব।

লেখক : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও প্রাক্তন সাংবাদিক।