‘কষ্টের কথা লিখে বা দেখিয়ে কোন লাভ নেই। কাজ করেই পেটে ভাত জুটে। কেউ খবর নেয় না। এগুলো কেউ দেখলেও খবর নিবে না। কাজই আমাদের ভরসা। কাজ ছাড়া কোন উপায় নাই। শুধু শুধু বিরক্ত না করে আমাদের কাজ করতে দিন। আপনার (প্রতিবেদক) সাথে কথা না বলে একটি ছুরি তৈরি করলেও দু’পয়সা আয় করতে পারবো।’

চোখে মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে কথাগুলো বলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মকার বাবুল দেব। ঈদকে কেন্দ্র করে তিনি উছলাপাড়াস্থ কামারশালায় কর্মব্যস্ত দিন পাড় করছিলেন।


বাবুল দেবের মতো করে একই বক্তব্য দেন শহরের দক্ষিণবাজারস্থ গলির কর্মকার লিলু দেব। তিনিও প্রতিবেদককে বলেন, এসব ছবি তুলে নেটে ছেড়ে তাদের কোন লাভ নেই।

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে একাধিক কামরশালায় ঘুরে কর্মকারদের এরকম প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। ঈদকে কেন্দ্র করে দা, ছুরি, বঁটি তৈরিতে সবাই খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন।

করোনা ও লকডাউনে বিপর্যস্ত তাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস কামারশালা। কিন্তু বছর দুয়েক তারা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। গত বছর যেমন তেমন চললেও এবছর তাদের জন্য অভিশাপ। কুলাউড়ার কর্মকার নিবারণ ধর ও শিবু দেব এসব হতাশার কথা জানান।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুলাউড়া শহরের উছলাপাড়া, দক্ষিণ বাজার গলি, ব্রাহ্মণবাজার, বরমচাল, জয়চন্ডি, পৃথিমপাশার কয়েকটি এলাকায় বিক্রি হচ্ছে পশুর চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটা, জবাই করার বিভিন্ন ধরনের বড় ছুরি, রামদা, চাকু, বঁটি, কাঠের গুঁড়ি।

দেশীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন মানের ছোট ছুরি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, একটু বড় ছুরি ৭০ থেকে ১০০ টাকা, রামদা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, বঁটি বিভিন্ন মানের আকারের ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চা পাতি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় ধারালো ছুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন কামারশালা ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকাররা খুব ব্যস্ত। কথা বলার মতো সময় তাদের হাতে নেই। দিন-রাত কাজ করার টুংটাং শব্দ শোনা যায় প্রতিক্ষণ। আগুনের উত্তাপে লোহা পুড়িয়ে তা হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে মনের মাধুরী দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন মাপের দা, ছুরি, বঁটি, রামদা। তাদের মাথার ঘাম পায়ে পড়ে, চোখের কোণে আগুনের ধোঁয়ার ময়লা জমে, তবু তারা থামে না, থামতে পারে না। কারণ, তাদের পরিবারের স্ত্রী-বাচ্চারা তাদের হাতের দিকে চেয়ে আছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডিজেএস-২