ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের নামাজ, কোলাকুলি, পশু কোরবানি, গোশত পাড়া-প্রতিবেশী আর স্বজনদের মাঝে বণ্টন; পরিবারে পরিবারে দেখা-সাক্ষাৎ, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া; আর দিনশেষে দীর্ঘদিনের গল্প আর না বলা কথার ডালি নিয়ে পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা। দীর্ঘদিন এটা দেখে আসছি আমরা। কিন্তু এবার নিয়ে ৪টি ঈদ যেন ভিন্ন, ঘরবন্দিময় ঈদ।

কথাগুলো বলছিলেন সিলেট নগরীর তালতলা এলাকার বাসিন্দা সানাওর রহমান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। ঈদের পরদিনই ফিরতে হবে- সরকারি এমন নির্দেশনায় বাড়ি যাননি তিনি। সিলেটভিউ-কে বলেন, করোনাভাইরাসে পুরো পৃথিবী নাকাল। অদৃশ্য এ ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক দূরত্বের নামে হারিয়ে যেতে বসেছে হৃদ্যতা- ভালোবাসা।


সরকারি এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটভিউ-কে বলেন, দুই বছর আগেও এমনটি ছিল না। এ নিয়ে চারটি ঈদ যেন অন্য রকম পার করলাম আমরা। মাস্ক পরে দূরত্ব রেখে চলাচল, ঘরবন্দি থেকে ঈদ উদযাপন; কীভাবে সম্ভব?

সিলেটে গত বছরের ৫ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। এর ১০ দিন পর সিলেটে প্রথম মৃত্যু ঘটে করোনায়। সোয়া বছরে সিলেটে থামেনি করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ। এরই মধ্যে পার হয়েছে চার চারটি ঈদ। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যাত্রায় এই ঈদগুলো পার করেছেন সিলেটবাসী। পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের কারও না কারও হাসপাতালে ভর্তি থাকা কিংবা মৃত্যুর খবর। এমনও হয়েছে, গতকাল ঈদ কিন্তু আগের দিন রাতেই মায়ের লাশবাহী গাড়িতে সন্তান। হাসপাতাল থেকে ছুটতে হয়েছে বাড়িতে, জানাজা শেষে মায়ের শেষ যাত্রা।

ঈদ কি আনন্দের? করোনায় জীবন যাওয়া পরিবারগুলো সেটা যেন ভুলে যেতে বসেছেন।

করোনার আগে ঈদ কেমন ছিল? জানতে চাইলে মিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী মাসুম আহমদ সিলেটভিউ-কে বলেন, করোনার আগের ঈদ ঈদের মতোই আনন্দময় ছিল। সামাজিক দূরত্বের বালাই ছিল না, ছিল না মুখে মাস্ক। কোরবানির পশু কেনা, হাটে-বাজারে ঘোরা, ছুটোছুটি কি-না করিনি! এক কথায় ঈদের ছুটির সময়টা ছিল প্রবল উৎসাহ, আনন্দ আর উত্তেজনার। তখন তো করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছিল না। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হলেই হতো কোলাকুলি, কুশল বিনিময়। চলত আড্ডা। পরিচিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া তো ছিলই। এবার বাড়িই যেতে পারিনি। ঈদটাও তাই ঘরবন্দি।

এদিকে, ঈদের সময় উপচে পড়া ভিড় থাকে সিলেটের সকল পার্ক, পর্যটন স্পট ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে। কিন্তু এবারও মহামারির কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ। তাই সেখানে বিনোদনও নেই! এবার সেখানে বিগত বছরগুলোর ন্যায় দেখা যাবে না শিশুদের কোলাহল, আর স্বজনদের ঘামে মাখা আনন্দময় মুখ।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম