এম. এ. মতিন, গোয়াইনঘাট:: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত জনপদের নাম বিছনাকান্দি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সাত পাহাড়ের গহীনে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অপরুপ প্রকৃতি এই বিছনাকান্দি যেন শিল্পীর হাতে আকা এক অনন্য ছবি। সাতটি পাহাড় সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে, মাঝ পথ দিয়ে বয়ে গেছে অনাবিল সৌন্দর্যের ঝর্ণার স্রোত ধারা। এসে পড়েছে বাংলাদেশের সবুজ গালিচায়। এরকম অপুর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাগল পারা হয়ে ছুটে আসেন, ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। সাধারণ পর্যটকের পাশাপাশি দেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিব, সেনাবাহিনীর প্রধান, পুলিশ ও র‍্যাব প্রধান থেকে শুরু করে সর্বস্তরের ভিআইপি লোকজন ভ্রমণ করেছেন বিছনাকান্দি। শুধু দেশের পর্যটক নয়, খোদ ড.গওহর রিজভীর স্ত্রীসহ বহু বিদেশী পর্যটকদের পিপাসা মিটিয়েছে এ বিছনাকান্দি। কিন্তু বিছনাকান্দি প্রবেশ মুখে আনফরের ভাঙ্গা নামক একটি খাল এ অঞ্চলের মানুষ ও দেশ-বিদেশ থেকে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য গলারকাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, আনফরের ভাঙ্গার খালের উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারীর পাশাপাশি রুস্তমপুর কলেজ, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ, ছাড়ার পার ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, কুপারবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, কুনকিরি ফারুক আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়, গোরাগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, ভিতরগুল উচ্চ বিদ্যালয়, বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্বওমি মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেনসহ দুই ডজনের অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। ঐতিহ্যবাহী হাদারপার বাজার ও কুপারবাজারসহ আশে পাশের ছোট ছোট বাজারগুলিতে প্রতিদিন যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ। রুস্তমপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০-২২টি গ্রামের মানুষ বসবাস করে আনফরের ভাঙার ওপারে।


এছাড়া কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের মানুষ ও এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। প্রতিদিনের পর্যটক এবং এলাকার মানুষ মিলে কমপক্ষে ২ লাখ মানুষ এ ভাঙ্গা দিয়ে আসা-যাওয়া করেন। জনবসতিপুর্ণ অঞ্চলের মানুষ আনফরের ভাঙ্গায় একটি ব্রীজের স্বপ্ন দেখছেন দীর্ঘদিন ধরে। আনফরের ভাঙ্গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে হাজারের উপরে মোটরসাইকেল পারাপার হয়। এ ভাঙ্গায় প্রায় দিন নৌকা ডুবির খবর পাওয়া যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। মাঝপথে নৌকা ডুবে অনেকেই বিলীন হয়ে যায় মেঘালয়ের ঘন কাল স্রোতে। অনেক সময় জীবনের একমাত্র স্বপ্নের মোটরসাইকেলটি তলিয়ে যায় আনফরের ভাঙ্গার পানিতে। সারাদিন পরিশ্রম করে বউ বাচ্চা পরিবারের জন্য নিয়ে যাওয়া দিন মজুরের সদাই টুকু ডুবে যায় পানির স্রোতের ধারায়।

এ নদীতে পার হওয়ার দৃশ্য দেখলে অথবা ভাঙ্গা খেয়া নৌকায় উঠলে অনেকের হার্ট বিট বেড়ে যায়। এভাবে একটা অজানা আতঙ্কে পার হতে হয় প্রতিদিন হাজার হাজার পথযাত্রীকে। আনফরের ভাঙ্গায় সেতু নির্মাণের জন্য মাপঝোঁক ও মাটি পরীক্ষা হয়েছে বহুবার। স্টিমিটও হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)'র কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে আনফরের ভাঙ্গার সেতুটি ঝুলে আছে। এমন অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন বলেন, আনফরের ভাঙ্গায় সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির হস্তক্ষেপে ইতিপূর্বে আনফরের ভাঙ্গায় সেতু নির্মাণের জন্য (বুয়েট ও এলজিইডি)এর সমন্বয়ে স্পেশাল একটি প্রতিনিধি দল আনফরের ভাঙ্গা পরিদর্শন করে ৫০০ ফুট লম্বা একটি সেতু নির্মাণের সুপারিশ করেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) চলমান ৩টি প্রকল্পের মধ্যে ৫০০ ফুট লম্বা সেতু নির্মাণ প্রকল্প না থাকায় এ ভাঙ্গায় সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী ইমরান আহমদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের চলমান ৩ প্রকল্পের যে কোন একটি প্রকল্পে আনফরের ভাঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করতে নিদের্শনা দেন। আর এর দায়িত্ব পান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবির।

এছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবির ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমানকে আনফরের ভাঙ্গা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক মাস পার হলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবিরের দেখা মেলেনি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সিলেটভিউকে বলেন, আনফরের ভাঙ্গায় সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ার কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউনে থেমে আছে কার্যক্রম।

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/মতিন/কেআরএস