সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের টুকইর (যথনাথা) গ্রামে দুবাই প্রবাসী আলাউদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া বেগমের (৩৫) ঘরে বুধবার রাতে একই গ্রামের মইনুল ইসলাম নামের যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় সাফিয়া বেগমসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন টুকইর (যথনাথা) গ্রামের মৃত রহমত আলীর ছেলে খসরুল ইসলাম। তিনি মৃত মইনুল ইসরামের ভাই।


মামলার এজাহারে উল্লেখ, দুবাই প্রবাসী আলাউদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া বেগমের (৩৫) সঙ্গে পাশের বাড়ির মানুষ হিসেবে নিহত মইনুল ইসলামের সুসম্পর্ক ছিলো এবং উভয় পরিবারের মধ্যে অবাধ চলাফেরা ছিলো। এরই সূত্র ধরে বুধবার (২৮ জুলাই) দিবাগত রাতে সাফিয়া বেগমের ঘরে মইনুল ইসলাম যান। সাফিয়া বেগমের ঘরে মইনুল প্রবেশ করামাত্র সাফিয়া ও অন্য আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মইনুল ইসলামকে জবাই করে হত্যা করে। নিহত মইনুল ঘাড়ে আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও মইনুলের আঙ্গুল এবং হাতের কব্জিতেও কাটার দাগ রয়েছে।

অপরদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সাফিয়া বেগম আদালতে ভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, সাফিয়া বেগম আদালতকে বলেন- দীর্ঘদিন ধরে মইনুল ইসলাম তাকে উত্যক্ত করতেন এবং প্রায় তাকে কুপ্রস্তাব দিতেন। বিষয়টি নিয়ে মইনুল ইসলামের পরিবার ও গ্রামবাসীকে একাধিকবার অবহিত করলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

সাফিয়া আরো জানান, মইনুলের ভয়ে রাতে প্রকৃতিক কাজ সম্পাদন করতে ঘরের বাইরে বের হতে পারতেন না তিনি। ফলে বসতঘরে একটি বালতিতে প্রাকৃতিক কাজ সারতেন সাফিয়া। এছাড়া প্রতিরাতে তার ঘরে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা চালাতেন মইনুল। তার ভয়ে একটি দা বালিশের পাশে রেখে সাফিয়া রাত্রি যাপন করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার দিবাগত-রাতেও বালিশের পাশে দা নিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ রাত ১১ টার দিকে ঘরের বেড়া ভেঙে মইনুল বসতঘরে প্রবেশ করলে উপায়ন্তর না দেখে বালিশের পাশে থাকা দা হাতে নিয়ে মইনুলকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেন সাফিয়া। কিন্তু ঘর থেকে বের না হয়ে মইনুল সাফিয়ার হাত থেকে দা কেড়ে নিতে যান এবং সাফিয়াকে আঘাতের চেষ্টা করেন। দা নিয়ে উভয়ের কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে মইনুলের ঘাড়ে আঘাত লাগে।

উল্লেখ্য, বুধবার দিনগত (২৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের টুকইর (যথানাথা) গ্রামের দুবাই প্রবাসী আলাউদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া বেগমের (৩৫) ঘর থেকে মইনুল ইসলামের লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরে সাফিয়াকে আটক করে পুলিশ। নিহত মইনুল ইসলাম (৩৫) একই গ্রামের মৃত রহমত আলীর ছেলে।

পুলিশ জানায়, বুধবার (২৮ জুলাই) দিবাগত-রাত ১২ টার দিকে রুস্তুমপুর ইউনিয়নের টুকইর (যথনাথা) গ্রামে দুবাই প্রবাসী আলাউদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া বেগমের বসতঘরে এক যুবকের লাশ পড়েে আছে মর্মে থানাপুলিশকে অবগত করা হয়। খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল চন্দ্র দেব পুলিশের একটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। রুস্তুমপুর ইউনিয়নের টুকইর (যথনাথা) গ্রামে দুবাই প্রবাসী আলাউদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া বেগমের বসতঘরে থাকা যুবকের লাশ উদ্ধার ও দুবাই প্রবাসী আলাউদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া বেগম (৩৫)-কে আটক করে গোয়াইনঘাট থানায় নিয়ে আসেন। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় ।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল চন্দ্র দেব বলেন, নারীঘটিত বিষয়ে মইনুল ইসলাম নামের যুবক খুন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত সাপেক্ষে এ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে। নিহত মইনুল ইসলামে ভাই খসরুল ইসলাম বাদি হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় দুবাই প্রবাসীর স্ত্রী সাফিয়া বেগম প্রধান আসামী করে আরো ৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ওসি জানান, গ্রেফতারকৃত সাফিয়া বেগমকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করার পর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / মতিন / ডালিম