(ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ছবি)

সিলেটসহ সারা দেশে ‘টিকটক’ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। টিকটক ব্যবহার করে অপরাধ ঘানোর দায়ে সারা দেশে মোট মামলা হয়েছে ১৩টি।

এর মধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের আওতাধীন শাহপরান থানায় ও সুনামগঞ্জে একটি করে মামলা হয়েছে। সিলেটসহ ১৩ মামলায় আসামি রয়েছেন ১০৫ জন।


জানা গেছে, সিলেটসহ সারা দেশে বাড়ছে ‘টিকটক’ করার নামে বাড়ছে ধর্ষণ, নারী পাচার ও কিশোর অপরাধ। আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে অশ্লীলতা ও সামাজিক সহিংসতা। টিকটকের ফাঁদে পড়ে বিপথগামী হচ্ছেন উঠতি বয়েসি মেয়েরা।

তবে সিলেটে যারা ‘টিকটক’ করার নামে নানা অপরাধ ঘটাচ্ছেন তাদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) একটি বিশেষ মনিটরিং সেল তৈরি করে সেই সেলের অধীনে ডাটা তৈরি করছে। ডাটা তৈরির পরপরই সিলেটের ‘টিকটকারদের’ বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নামবে পুলিশ।

সম্প্রতি সিলেটের জাফলংয়ে গিয়ে লাইকি ভিডিও করার কথা বলে এক কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সিলেটের শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর বাবা। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গত ১৯ মে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

এছাড়াও প্রায়ই দেখা যায়, সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামন, লাক্কাতুরা চা বাগান, এয়ারপোর্ট রোডের অভিজাত হোটেলের রাস্তা, এয়ারপোর্ট রোড, বাইশটিলা, শাহপরাণ ব্রিজ, নগরীর কাজিরবাজার সেতুসহ নগরীর নামী-দামী হোটেল-রেস্টুরেন্টে এসব ‘টিকটক’ ভিডিও তৈরি করছেন তরুণ-তরুণীরা। এসময় মেয়েদের অশ্লীল পোষাক পরিহিত অবস্থায়ই দেখা যায় বেশি। তবে এবার তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে পুলিশ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের রোববার (১ আগস্ট) সিলেটভিউ-কে বলেন, সিলেটে টিকটক ভিডিও তৈরি করে যারা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করছে এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ একটি মনিটরিং সেল গঠন করে এর আওতায় এ ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে এবং ডাটা তৈরির কাজ শেষ হলেই অ্যাকশনে নামবে পুলিশ।

তিনি বলেন, বিশেষ এই উদ্যোগ এবং অভিযান ছাড়াও যেখানেই টিকটক তৈরির নামে তরুণ-তরুণীরা অশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করবে সেখানেই বাঁধা দেবে পুলিশ। পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বেআইনি এমন কনটেন্ট প্রচার না করার ব্যাপারে সম্প্রতি টিকটকের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা বাংলাদেশে টিকটক ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটনকারীদের ব্যাপারে তথ্য চেয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে এ বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনার পর থেকে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে, এমন কর্তৃপক্ষগুলো টিকটকের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও (বিটিআরসি) টিকটকের সঙ্গে কথা বলে। কিছু অপরাধের তদন্ত নিয়ে সিআইডি টিকটকের সঙ্গে জুম মিটিংয়ে বসে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে, এ দেশের আইনে বৈধ নয় এমন কনটেন্ট আপলোড করার ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সিআইডি সূত্র জানায়, টিকটককে বেআইনি কাজের তথ্য সরবরাহে অনুরোধ করেছে তারা। উদাহরণ হিসেবে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের কথা বলেছে সিআইডি। এ আইনে কিছু বিষয়কে পর্নোগ্রাফির উপাদান বলে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের আইন অন্যান্য দেশের আইনের চেয়ে আলাদা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের টিকটকাররা আইন ভঙ্গ করছেন কি না, সেদিকে নজর রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই সূত্র আরও জানায়, টিকটক কর্তৃপক্ষের মনোভাব ইতিবাচক। তারা আরও জানিয়েছে, টিকটকের একটি কমিউনিটি গাইডলাইন রয়েছে। সেই নির্দেশিকা বাংলায় অনুবাদ করা হচ্ছে।

টিকটকের পক্ষে ওই বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর মহিদ বানসাল নেতৃত্ব দেন। এর বাইরেও ওই বৈঠকে আরও দুজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ও অপরজন আইনগত বিষয় দেখভাল করেন। এর আগে বাংলাদেশ কয়েকজন টিকটক ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়েও পায়নি।

টিকটক চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের নিয়ন্ত্রণাধীন। একসময় এর গ্রাহক তালিকার বড় অংশ ছিল ভারতে। সেন্সরটাওয়ারের হিসাবে ভারত টিকটকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরও এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে ৩০০ কোটি আইডি থেকে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ৩৮ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক প্রথমবারের মতো এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। ফেসবুক ও ফেসবুক–সংশ্লিষ্ট অ্যাপ, যেমন মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের পরই এখন টিকটকের অবস্থান।

সিলেটসহ সারা দেশে ১৩ মামলা, আসামি ১০৫ :
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টিকটক ব্যবহার করে অপরাধের দায়ে মামলা হয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে দুটি এবং সিলেট মহানগর পুলিশের আওতাধীন শাহপরান থানা, সুনামগঞ্জ ও বরগুনায় একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আটজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আসামি ১০৫ জন।

প্রথম মামলাটি হয়েছিল আলোচিত টিকটকার ইয়াসিন আরাফাত অপুর বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে মারধর ও বেআইনি সমাবেশের অভিযোগ উঠেছিল। বেশ কিছুদিন জেল খেটে বের হওয়ার পর তিনি এখন আবার টিকটকে সক্রিয় হয়েছেন। এরপর টিকটকারদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে চারটি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পাঁচটি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা হয়েছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম