করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে আরও ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৭৭৬ জন।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু ও নতুন রোগী শনাক্ত দুটোই কিছুটা কমেছে।


গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৫৫ হাজার ২৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিন ২৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৫ হাজার ৯৮৯ জন। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩। মোট মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৭ জনের। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ২৯৭ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৬৫ জন, খুলনা বিভাগে ৩২ এবং রাজশাহীতে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ।

এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার দুই সপ্তাহের সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চলছে। ৫ আগস্ট এই বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ৫ দিন বাড়িয়ে তা ১০ আগস্ট পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এবং তাদের ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদ ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিল। ঈদের পরে করোনায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত আগের চেয়ে বেড়েছে।

এর মধ্যে গত রোববার থেকে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা চালু হয়েছে। মাত্র এক দিন হাতে রেখে কারখানা খোলার ঘোষণা দেওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ ঢাকার পথ ধরেন। বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাক, পিকআপভ্যান, অটোরিকশায় গাদাগাদি করেন আসেন শ্রমিকেরা। ফেরিতে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে পদ্মা পার হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এতে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বর্তমানে বিশ্বের যেসব দেশে একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যাচ্ছে, সেই তালিকায় নবম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বাদশ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার পর্যন্ত হালনাগাদ) বিশ্বজুড়ে করোনা রোগী শনাক্ত ও এতে মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪২ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জনের। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মৃত্যুর তালিকায় ব্রাজিল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান তৃতীয়। আর রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার ৫৬৮ জনের। তারপরে মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে ৯১০ জনের। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায় ৭৮৫ জনের।

এ সময় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ভারতে ৪০ হাজার ১৩৪ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে ব্রাজিলে ৩৭ হাজার ৫৮২ জন। রোগী শনাক্তের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইরান ৩২ হাজার ৫১১ জন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম


সূত্র : প্রথম আলো