দেশের ১১ সড়কের মালিকানা নিয়ে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে টানাটানি চলছে। যশোর, মেহেপুর জেলার সড়কগুলো নিজেদের বলে দাবি করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৗশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এসব সড়কের দৈর্ঘ্য ২১৯ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে ৬১১টি সড়ক গেজেটভুক্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছে এলজিইডি। দাবি নিষ্পত্তির জন্য আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর স্টান্ডিং কমিটির সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামুন-আল-রশীদ সোমবার বলেন, সড়কের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। নতুন সংজ্ঞার জন্য ইতোমধ্যেই ২-৩টি বৈঠক করেছি। এখনো কোনো সমাধান আসেনি। তবে কাজ অব্যাহত আছে। সড়কের মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়টি প্রধানত ইগোর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া যে সংস্থার দায়িত্বে নতুন সড়ক যাবে তাদের হিসাবে কিলোমিটার বেড়ে যাবে এবং কাজও বেড়ে যাবে। যারা মালিকানা হারাবে তাদের কাজ কমে যাবে। এজন্যই কেউ মালিকানা ছাড়তে চায় না। তবে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি সড়কে দেখা গেছে দুদিকে সড়ক ও জনপথের বড় রাস্তা, আর মাঝখানে এলজিইডির সরু রাস্তা। এক্ষেত্রে জনগণ বড় রাস্তার যে সুফল পাওয়ার কথা তা পাচ্ছে না। এরকম ক্ষেত্রে মালিকানা হস্তান্তর করা প্রয়োজন। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।


বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা তো ব্যক্তিগত কোনো সম্পত্তি নয়, জনগণের সম্পত্তি। কিন্তু এর দেখাশোনা কে করবে তাই নিয়েই ঝগড়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি এমন যে, একই পরিবারের দুই ভাইয়ের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধের মতো। এখানে যেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তা হলো ক্ষমতার লড়াই এবং আর্থিক মুনাফা লাভের বিষয়টি জড়িত। এছাড়া আর অন্য কোনো কারণ তো খুঁজে পাচ্ছি না। যদি এমন হতো জনগণের কল্যাণের কথা ভেবেই বলা হচ্ছে। তাহলে এগুলো রাস্তা কার দায়িত্বে থাকবে সেটি নির্ভর করত দক্ষতা ওপর। যে সংস্থা বেশি দক্ষতা দেখাতে পারে তাকেই দেওয়া উচিত। কিন্তু এখানে তো দক্ষতার প্রতিযোগিতা হচ্ছে বলে মনে হয় না। সেটি হলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হতো।

সূত্র জানায়, যে ১১টি সড়ক নিয়ে সরকারের দুই সংস্থার মধ্যে টানাটানি চলছে সেগুলোর মধ্যে যশোর জেলায় রয়েছে ৭টি। এগুলো হচ্ছে-মনিরামপুর-নেহাল-অভয়নগর (নূরবাগ) সড়কের দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। এটি বর্তমানে এলজিইডির মালিকানায় রয়েছে। এখন সওজের মালিকানা দাবি করে হস্তান্তরের প্রস্তাব করেছে। এভাবে অন্যান্য সড়কও এলজিইডি থেকে সওজের কাছে মালিকানা হস্তান্তরের প্রস্তাব রয়েছে। অন্য সড়কগুলো হচ্ছে, সাড়ে ২১ কিলোমিটার কেশবপুর-নেহালপুর সড়ক। ১৭ কিলোমিটার অভয়নগর (ভাঙ্গাগেট)-মথুরামপুর বাজার-বিছালি বাজার-আগাদিয়া বাজার-নড়াইল (গোবরা সড়ক)। ১৬ কিলোমিটার চৌগাছা-মহেশপুর সড়ক। ২৩ কিলোমিটার ঝিকরগাছা-চৌগাছা সড়ক। ৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অভয়নগর (বসুন্দিয়া)-বাঘারপাড়া (ধলগা) সড়ক এবং ২৮ কিলোমিটারের শার্শা-চৌগাছা সড়ক।

এছাড়া মেহেরপুর জেলার ৪টি সড়ক হচ্ছে-১৯ কিলোমিটার পশ্চিম মালসাদহ-হাড়াভাঙ্গা হয়ে সাহেবনগর (বাকিরমোড়) সড়ক। এছাড়া ৩০ কিলোমিটারের গাংনী-হাটবোয়ালিয়া-আসমানখালী-ভালাইপুর সড়ক। ১৩ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার গাংনী (পূর্ব-মারসাদহ)-বারদী বাজার সড়ক এবং ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বামুন্দী-কাজীপুর-প্রাগপুর বিডিআর ক্যাম্প সড়ক।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের খুলনা জোন অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী মোবাইল ফোনে বলেন, রোডের বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা আছে।

সে অনুযায়ী এগুলো এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে স্থানান্তরের দাবি যৌক্তিক। সেজন্যই আমরা মালিকানা স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছি। এছাড়া সম্প্রসারিত সড়ক নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে এগুলো প্রয়োজন। আমাদের অধীনে আসলে সরকারের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে সড়ক ও জনপথের মানদণ্ড অনুযায়ীই সংস্কার করা হবে। এতে করে জনগণ উন্নত সড়ক যোগাযোগর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) রতন কুমার দে বলেন, এলজিইডি এসব রাস্তা তাদের মালিকানায় নিতে আবেদন করেছে। তারা যে আবেদন করলেই পেয়ে যাবে এবং আমরাও যে ছেড়ে দেব বিষয়টি সে রকম নয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠক আছে। সেখানেই আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। তার আগে আর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুনভাবে অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। যেগুলোর এখনো আইডি নম্বর হয়নি। ফলে এসব রাস্তায় এলজিইডি কোনো উন্নয়ন কাজ বা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গোপালগঞ্জ জেলার এ রকম ৬১১টি সড়কে গেজেটভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে এলজিইডি। এগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৮৬৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার। প্রস্তাবিত সড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা জেলায় এলজিইডির বাছাই করা সড়কের সংখ্যা ৯৬টি। এগুলোর দৈর্ঘ্য ১৪০ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার ২৭৯টি সড়কের দৈর্ঘ্য ৫৫৯ দশমিক ২১ কিলোমিটার। গোপালগঞ্জ জেলার ২৩৬টি সড়কের দৈর্ঘ্য ১৬৪ দশমিক ১২ কিলোমিটার।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/মিআচৌ-০৭


সূত্র : যুগান্তর