ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মিলবন্ধনে জার্মানির রাজধানী বার্লিন ইউরোপের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর। কত বিখ্যাত কিছুইনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, শহরের অলিতে গলিতে আছে স্প্রিং নামের নদী, বার্লিন ক্যাথেড্রাল, পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে ভাগ করা ঐতিহাসিক বার্লিন দেয়াল, জামার্নির পার্লামেন্ট রাইখসটাগ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মিউজিয়ামগুলো আরও কতকিছু।

বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গসহ আশেপাশের শহরে শতাধিক সািস্টয়ানদের বসবাস। প্রবাস জীবনে কর্মব্যস্ততার ফাকেঁ ক্যাম্পাসের সেই সুখকর স্মৃতিগুলো সবার মাঝে ফিরিয়ে আনতে ১১ ই সেপ্টেম্বর শনিবার জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার লিস্টেনবার্গ পার্কে আয়োজন করা হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা।


দুপুর একটার দিকে বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গসহ আশেপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা পার্কে জড়ো হতে থাকে। ধুমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সবার মুখে মুখে ক্যাম্পাসের সেই পুরানো দিনের গল্প। একে একে চোখজুড়ানো সেই এক কিলো, ছোট্ট টিলার উপর সবুজের মাঝে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার, হল, হ্যান্ডবল মাঠ, লাইব্রেরি বিল্ডিং, গোলচত্বর, কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম, শিকড়, নোঙ্গর, মাভৈ, রিম, সুপা, দিক থিয়েটারসহ ক্যাম্পাসের অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গল্প যেন থামতেই চায় না। জম্পেশ আড্ডা, খানিক খুনসুটিঁ যেন ক্যাম্পাসের সেই কবির কিংবা মাসুক মামার টংয়ের আবহ ফিরিয়ে নিয়ে আনে। এরই মাঝে হঠাত নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি যেন মনে করিয়ে দেই বৃষ্টিতে এক কিলোতে হাঁটার ফেলে আসা দিনগুলো। ঘুরে ফিরে ক্যাম্পাসের বন্ধু-বান্ধবদের খোজঁ-খবর নেয়া যেন মনে হয় এইতো সেইদিন, আবার যদি ফিরে যাওয়া যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর সেই পুরানো দিনগুলোতে। আড্ডা শেষে দুপুরে পরিবেশন হয় দেশি খাবার।

মধ্যাহ্ন ভোজের পর শুরু হয় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিচয় পর্ব ও ফটোসেশন। এরপর পরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব। এতে দরাজ কন্ঠে গান গেয়ে শোনান ক্যাম্পাসের সবার প্রিয়মুখ পলাশ। গানের সাথে সুর মিলিয়ে সম্মিলিত কন্ঠে সবাই গেয়ে উঠে ‌‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’। মুহুর্তের মধ্যে সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল ক্যাম্পাসের পুরানো স্মৃতির পাতায়।

এদিকে শিক্ষার্থীর অধিকাংশই জার্মানিতে এসেছে মাস্টার্স করতে। পাশের কটবুস শহর থেকে এসেছিল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিয়াসাত, বিবিএর আসিফ, ইউরোপা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত এন্থ্রোপলোজির সৌমেন, সুদূর ব্রেমেন শহর থেকে কম্পিউটার সায়েন্সের মুকুল ছাড়াও ছিল তৌহিদ, নওশাদ, পার্থ , রাতুল, আনোয়ার, নোমান, কামালসহ গোটা পঞ্চাশেক সাস্টিয়ান। বার্লিনে শশী কিংবা হিমেলের মত অনেকেই করছেন চাকরি-বাকরি। দেশ থেকে সাস্টের অনেক কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট এসেছে সরাসরি চাকরি নিয়ে। আর শামীমের মত পুরোদস্তুর সংসারী সাস্টিয়ানদের সাথে গুটি গুটি পায়ে এসেছিল সেকেন্ড জেনারেশন।

অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন যাবত জার্মানিতে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন সাস্টিয়ান জি,ইর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সবার প্রিয়মুখ রসায়ন বিভাগের ৫ম ব্যাচের ছাত্র ড. নিধু লাল বণিক, তিনি সবার কাছে নিধু দা নামে পরিচিত। বর্তমানে তিনি একজন পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে ইউরোপিয়ান কমিশনে কর্মরত। সমাপনী বক্তব্যে তিনি অনুষ্ঠান সফল করার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

ভবিষ্যতে সাস্টিয়ান বন্ধনকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে পরবর্তী কর্মসূচী এবং নতুন সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এই ধরনের আয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

গ্রাফিতির নগর বার্লিনে ধীরে সন্ধ্যা ঘনায় , একরাশ আনন্দ ও একবুক আশা নিয়ে সবাই পা বাড়ায় নীড়ের পানে। ফিরতে ফিরতে কানে বেজে ওঠে পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি ওে হায়। ও সেই চোখের দেখা, প্রানের কথা, সে কি ভোলা যায়।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআর/এসডি-১