মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চলের আজ ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কচুয়াবহর গ্রামে ১৯৩৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম দেওয়ান ইসহাক আলী, মাতা দেওয়ান কুলসুম বেগম। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।


ছাত্র জীবনে এম.সি কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ভালোবাসতেন ফুটবল খেলতে ও কবিতা লিখতে।

ডা. দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে অপরিচিত একটি নাম।
আদর্শিক রাজনীতির এক উজ্জ্বল বাতিঘর ছিলেন ডা. চঞ্চল। সিলেটের ছাত্রলীগের রাজনীতির শুরুটা হয়েছিলো উনার হাত ধরেই। অবিভক্ত সিলেট জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্টাতা ও সভাপতি হিসেবে ছাত্রলীগের যাত্রা শুরু করেন পূণ্যভূমি সিলেটে।

ছাত্ররাজনীতি শেষে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে যুব রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেন। অবিভক্ত সিলেট যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের যুব আন্দোলনের নেতা হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন পুরো দেশ।

আপাদমস্তক একজন স্পষ্টভাষী রাজনীতিবিদ ডা. চঞ্চল ছিলেন স্বাধীনতা উত্তর সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানীদের হাতে বন্দি হওয়ার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র পুলিশের ওয়্যারলেসে জেলায় জেলায় প্রেরণ করা হয়েছিল। সিলেট জেলায় তা পৌঁছে যায় তৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ফরিদ গাজীর কাছে। ওয়্যারলেস বার্তার সংবাদ পেয়ে ডা. দেওয়ান নূরুল হোসেন চঞ্চল আওয়ামীলীগ সহ সিলেটের তৎকালীন সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও জনসাধারণের কাছে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। সিলেটের ছাত্র ও যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সাহস যোগান। হাজার হাজার যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তি বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রেরণ করেন। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে হাজার বছরের কাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভ করে।

জননেতা ডা. নুরুল হোসেন চঞ্চল স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সিলেট জেলায় তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের দেশ গড়ায় নির্লোভ কাজ করে যান। তিনি সিলেটে রিলিফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি বাকশাল গঠনের প্রতিবাদে জেনারেল ওসমানী সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলে সিলেট-৬ (ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে ২০ এপ্রিলের উপ-নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ও যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনিকে হত্যার পর সারাদেশে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে জেল, জুলুম ও নির্যাতন। সে সময়ের সামরিক সরকারের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সিলেটের মাটিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করতে নিরলস ভাবে কাজ করে যান তিনি। তৎকালীন যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. দেওয়ান নরুল হোসেন চঞ্চল পরবর্তীতে আওয়ামী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ১০ দলীয় ঐক্য নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলেন।

১৯৭৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপির জয় জয়কার হলেও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইনামুল হক চৌধুরী (বীর প্রতীক) ৩ হাজার ৫শ ৭৩ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী ফতেহ ইউনুছ খানকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ডা. দেওয়ান নূরুল হোসেন চঞ্চল জীবন বাজি রেখে কাজ করেন সে সময়। ১৯৮২সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকে ১৫ দলীয় ঐক্য জোটের পক্ষে সিলেটে নেতৃত্ব দেন ডা. নূরুল হোসেন চঞ্চল।

১৯৮৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মাত্র ৪৫ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান......

ড. দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল শুধুমাত্র একটি নাম নয়, সকল আদর্শিক রাজনীতিবিদ ও তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার বাতিঘর।

মহান আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতবাসী করেন, আমিন।


লেখক: সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। সাধারণ সম্পাদক, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ।