সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ‘এমসি (মোহাম্মদ চৌধুরী) একাডেমি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ’র এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাড়ি-টুপি নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।

স্থানীয় অনেকে আবেগের বশে ‘কঠোর’ আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে- আজ এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।


এমসি একাডেমির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে দেয়া পোস্টের ভিত্তিতে জানা গেছে, সোমবার স্বনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১০ম শ্রেণির মানবিক শাখার ৫ জনের কাছে মোবাইল পান একজন শিক্ষক। এই ৫ জনের মধ্যে একজনের মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি ছিলো । তখন ওই স্যার এ ছাত্রকে জামাত-শিবির তকমা দিয়ে গালিগালাজ করা শুরু করেন।

ছাত্রটি তখন স্যারকে জানায়- সে তবলীগে ছিলো এবং প্রমাণস্বরূপ তার সঙ্গে থাকা কিছু কাপড়ও সে স্যারকে দেখায়। কিন্তু ওই স্যার এতে কর্ণপাত না করে তাকে চরম অপমান করে ১০-১৫ মিনিট যাবত গালিগালাজ করেন।

সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- ওই স্যারের মূল উদ্দেশ্য ছিল দাড়ি-টুপির বিরুদ্ধে কথা বলা। আর শিবির নাম নেয়া ছিলো একটি কৌশলমাত্র। তিনি ৫জনের কাছে মোবাইল পেয়েছেন, তাই ৫ জনকেই সমানভাবে শাস্তি দিবেন। তা না করে শুধু দাড়ি-টুপিওয়ালা ছাত্রকেই কেন টার্গেট করলেন?

এর আগেও ওই স্যার এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ ছাত্রদের।

এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এমসি একাডেমির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারা ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় বইয়ে দেন। অনেকেই আজ এমসি একাডেমির সামনে অবস্থান নিয়ে ‘কঠোর’ আন্দোলনের হুমকি পর্যন্ত দেন।

তবে বিষয়টি নজের আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে বর্তমান শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এমসি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত কুমার তালুকদার। তিনি প্রতিষ্ঠানের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি ক্ষুদেবার্তা প্রদান করেন। এতে তিনি বলেন, ‘স্নেহের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, আমি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ঢাকায় ছিলাম। আজ দুপুরে বাসায় এসেছি। কিছুক্ষণ আগে এমসি একাডেমির একটি বিষয় আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমসি একাডেমি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। আগামীকাল আমি প্রতিষ্ঠানে এসে তোমাদের সাথে নিয়ে আমরা দেখবো। এখন পরীক্ষার্থীসহ কলেজ সেকশনের আমার যে সকল ছাত্র ফেইসবুকে এ কমেন্ট করছো তা প্রতিষ্ঠানের কথা বিবেচনা করে ডিলিট করে দাও। এটা তোমাদের প্রতি আমার বিশেষভাব অনুরোধ। তা না হলে মানুষের মনে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হবে। বিষয়টি আমরা সবাই বসে গুরুত্ব দিয়ে দেখবো। আশা করি তোমরা আমার কথাটি দায়িত্ব নিয়ে বিবেচনা করবে। সবাই ভালো থেকো।’

এ বিষয়ে আজ (বুধবার- ২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে অফিসিয়াল মুঠোফোনে কথা হয় এমসি একাডেমির শিক্ষক রাজিবের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমরা এখনও পুরোপুরি জানি না। ওই ছাত্র বা তার অভিভাবক কেউই আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়নি। শুধু এ বিষয়ে ফেসবুকেই লেখালেখি হচ্ছে। এতে স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিই হচ্ছে শুধু।

তিনি বলেন, আজ আমরা এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছি। বৈঠকে ওই ছাত্র ও শিক্ষকের বক্তব্য শুনবো। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো এবং সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে সার্বিক বিষয় জানাবো।

অভিযোগ যদি সত্যি হয় তবে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম