দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সাথে সাথে আমেরিকায় অনেক চিকিৎসক প্রাইমারি সেবা বাদ দিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল ফিল্ডে স্পেশালাইজড হতে শুরু করেন। এতে আমেরিকাজুড়ে প্রাইমারি কেয়ার ডাক্তারের অভাব দেখা দেয়। চিকিৎসকরা যাতে নিজেদের ইচ্ছামত বিভিন্ন ফিল্ডে স্পেশালাইজড হতে পারেন আবার সবার জন্য যাতে প্রাইমারি কেয়ারের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় সেজন্য ডা. ইউজেন স্টিড ১৯৬৫ সালে ডিউক ইউনিভার্সিটিতে সর্বপ্রথম ‘ফিজিশিয়ান অ্যাসিটেন্ট’ নামে প্রোগ্রাম চালু করেন।

একজন ফিজিশিয়ান অ্যাসিটেন্ট ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন কিন্তু প্রেসক্রিপশন লিখা থেকে শুরু করে রোগীর চিকিৎসার জন্য সব কাজ করতে পারেন। নার্স প্র‍্যাকটিশনার (এনপি) এদিক থেকে আরো এগিয়ে। তারা ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন এবং একজন ডাক্তার যা করতে পারেন মুটামুটি সবই করে থাকেন। এভাবে আমেরিকাজুড়ে ডাক্তারদের অভাব কমানোর চেষ্টা করা হয়।


চিকিৎসাক্ষেত্রে আমেরিকায় বিভিন্ন লেভেলের কর্মী রয়েছে যারা সরাসরি রোগীর সেবায় নিয়োজিত। বাসায় এম্বুলেন্স ডাকলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য ইমার্জেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইএমটি) ছুটে আসে যারা এক থেকে কয়েক বছর প্রশিক্ষণের পর এ কাজে যোগদান করতে পারে। তারপর হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের নার্স রয়েছে। লাইসেন্সড প্র‍্যাকটিকেল নার্স (এলপিএন), সার্টিফাইড নার্সিং অ্যাসিটেন্ট (সিএনএ), রেজিস্টার্ড নার্স (আরএন) ইত্যাদি। এসব ডিগ্রি অর্জন করার জন্য বিভিন্ন লেভেলের পড়াশোনা করতে হয় এবং ডিগ্রির লেভেলের উপর নির্ভর করে দায়িত্ব ও বেতন নির্ভর করে। হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীর কথা আর উল্লেখ না ই করি।।

বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে সরকারি চিকিৎসক আছেন ৩০ হাজার৷ আর সবমিলিয়ে নিবন্ধিত চিকিৎসক আছেন এক লাখের মতো। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীর হিসেব ধরলে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩০ হাজারের মত। বাংলাদেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট হাসপাতালের সংখ্যা সাত হাজার ৩১২টি৷ এরমধ্যে সরকারি হাসপাতাল দুই হাজার ২৫৮টি, যার মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকও ধরা হয়৷ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ২৫৪টি৷ বাংলাদেশে এখন এক হাজার ৫৮১ জনের জন্য একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক আছেন৷ আর প্রতি ১০০০ জনের জন্য নার্স মাত্র ০.৪ জন। সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫২ হাজার ৮০৭টি৷ আর বেসরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৯০ হাজার ৫৮৭টি৷ সরকারি হাসপাতালে অপর্যাপ্ত বেড, চিকিৎসার অনুকূল পরিবেশ না থাকা ইত্যাদি কারণে এখন অনেকেই সরকারি হাসপাতালবিমুখ হচ্ছে। যেকারণে শহরের হাসপাতালগুলোর উপর চাপ বাড়ছে।

আমেরিকার জনসংখ্যার তুলনায় এখনো স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা কম, কিন্তু আমেরিকায় একজন রোগীকে সেবা প্রদান করার জন্য কত লেভেলের স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োজিত আছে তা আমি আগেই বলেছি। একবার চিন্তা করে দেখুন বাংলাদেশে চিকিৎসক বাদে স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা এখনো কত কম? স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির কথা বাদ দিলাম; স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়াতে না পারলে কোনদিনই স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে আমার মনে হয়। স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়লে চিকিৎসকদের উপর চাপ কমবে এবং রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা কম করতে হবে।