সৌদি আরবে 'বিনা দোষে' সাজাপ্রাপ্ত সেই বাংলাদেশি কর্মী আবুল বাশারের পাশে দাঁড়িয়েছে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট।

আবুল বাশার ঘটনার শিকার হয়েছেন- তদন্তের পর বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর দণ্ড বাতিলের জন্য সৌদি আরবের আদালতে আপিল আবেদন করেছে বাংলাদেশ।


গতকাল সোমবার (১১ অক্টোবর) জেদ্দা কনস্যুলেট এক চিঠিতে পররাষ্ট্র সচিব ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিবকে এ তথ্য জানিয়েছে। জেদ্দা কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, 'আচারের প্যাকেট' বলে আবুল বাশারের ব্যাগে জোর করে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেন বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত এসআর সুপারভাইজার নূর মোহাম্মদ। সৌদিতে প্রবেশের সময় তাঁর ব্যাগ থেকে সেই ইয়াবা উদ্ধার করেন সেদেশের বিমানবন্দরে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ওই ঘটনায় আবুল বাশারকে গ্রেপ্তারের পর ২০ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর।

করোনা মহামারিতে গত বছর ১২ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন আবুল বাশার। ছুটি শেষে কাজে ফিরতে এ বছর মার্চের ১১ তারিখ সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। ওই দিন দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ৪ নম্বর গেইট দিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। বোর্ডিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়ালে তাকে এক ব্যক্তি একটি প্যাকেট সৌদি আরব নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। প্যাকেটে কিছু আচার ও খাবার আছে জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, সৌদিতে অবস্থানরত তার ভাই মো. সাইদ প্যাকেটটি বিমানবন্দর থেকে নেবেন।

অপরিচিত ব্যক্তির প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান বাশার। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আবুল বাশারকে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেন। প্যাকেট না নিলে তাঁকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলেও হুমকি দেন। তাতেও নিতে রাজি না হলে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেই জোর করে বাশারের ব্যাগে প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেন। ভয়ভীতি দেখানোয় এবং ফ্লাইটের সময় হয়ে যাওয়ায় কারও কাছে কোনো অভিযোগ না দিয়ে ফ্লাইটে ওঠেন বাশার। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁর ব্যাগ তল্লাশি করলে ওই প্যাকেটে ইয়াবা পায়। এরপর জেলে পাঠানো হয় আবুল বাশারকে।

বিষয়টি জানার পর তা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট ভারবাল এবং মক্কাস্থ সোমাইশিতে সামারি কোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয় এবং কনস্যুলেটের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

আপিল আবেদন জমা দেওয়ার জন্য আমিনুল ইসলাম ছাড়াও কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. আরিফুজ্জামান এবং অনুবাদক ও আইন সহকারী সালেহ আহমেদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে যান।

আমিনুল ইসলাম জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে পাঠানো কাগজপত্র, প্রতিবেদন, ভিডিও ক্লিপ, কনস্যুলেট থেকে পাঠানো 'নোট ভারবাল',  চিঠি, রায় পর্যালোচনা ইত্যাদি পারিপার্শ্বিক অবস্থার সার্বিক বিশ্লেষণ করেন। এরপর কনস্যুলেটের আইন সহকারীদের সহায়তা ও কয়েকজন আইনজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী আবুল বাশারের পক্ষে আপিল আবেদন প্রস্তুত করেন। নির্দোষ হয়েও আবুল বাশারকে যেন দণ্ড ভোগ করতে না হয়, সেজন্য আইনজীবী নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে কনস্যুলেট চিঠিতে জানিয়েছে।

একই চিঠিতে আবুল বাশারের পক্ষে সম্ভাব্য যে আইনজীবী আইনি লড়াই করবেন, তাঁদের নামের তালিকাও পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত আইনজীবীর খরচ বাবদ ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছে কনস্যুলেট। আগামী ২৪ অক্টোবরের মধ্যে আইনজীবী নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে। এর আগে গত ৭ অক্টোবর আবুল বাশারের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছে কনস্যুলেট।  

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/মিআচৌ-০৮


সূত্র : কালের কণ্ঠ