কুমিল্লার জের ধরে সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার পর পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম।

এ সময় জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


সিলেট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে রাতভর হামলাকারীদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। কাউকে গ্রেফতারের বিষয়ে প্রশাসন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, রাতভর অভিযানে অন্তত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকালে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দিঘীর উত্তরপাড়স্থ পূজা মণ্ডপে প্রতিমার পায়ের ওপর পবিত্র কুরআন রেখে অবমাননার একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারাও তোপের মুখে পড়ে, বাঁধে সংঘর্ষ। এরপর দুপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

এদিকে, কুমিল্লায় পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত থাকলেও এর জের ধরে বুধবার সন্ধ্যারাতে সিলেটের জকিগঞ্জে পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ইউএনও, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ওসি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়ি। ঘটনাটি বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে ঘটেছে।

এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে। সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মস্তুফা উদ্দিন ও পুলিশ-জনতাসহ ৩৫/৪০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ও পুরিশ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে এর প্রতিবাদে কালিগঞ্জে সন্ধ্যার পরে মিছিল বের করার মাইকিং করা হয় এবং এশার নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল বের করেন। মিছিল শুরু করেই দায়িত্বরত পুলিশের উপর চড়াও হয় মিছিলকারীরা। এরপর মিছিলটি মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিজস্ব গাড়ি রাখা দেখতে পেয়ে এসব গাড়িতে হামলা ওভাঙচুর চালান মিছিলকারীরা।

এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, ওসি আবুল কাসেম ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে অবস্থান করায় হামলাকারীদের কবল থেকে রক্ষা পান।

অনাকাঙ্ক্ষিত সকল ঘটনা ঠেকাতে পরে র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে সিলেট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম রাতভর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতিও চলছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে, কালিগঞ্জসহ পুরো জকিগঞ্জে প্রতিটি পূজা মণ্ডপে নাশকতা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় সিলেট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান সিলেটভিউ-কে বলেন, রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের বিষয়ে দুপুরের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে ঊগ্র গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেবো না। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন কাজ করছে।

উল্লেখ্য, কুমিল্লায় এই ঘটনার পর বুধবার বিকালে ধর্ম মন্ত্রণালয় এক জরুরি ঘোষণায় বলেছে- “সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন অবমাননা সংক্রান্ত খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খবরটি খতিয়ে দেখার জন্য ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেছি। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন হাতে তুলে না নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / হাছিব / ডালিম