বৃহত্তর সিলেটের একটি পরিচিত সামাজিক সংগঠন গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব। যার সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। সামান্য এ পথচলায় ইতিমধ্যে অর্জন করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের পদক-সম্মাননা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো- গোলাপগঞ্জসহ দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে অর্জন করেছে আশাতীত ভালোবাসা। আর এরকম ভালোবাসা নিয়ে মানুষের অন্তরে স্থান করে নিবে না কেন! যদি কাজ হয় একমাত্র সমাজ পরিবর্তনের।

২০১৪ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর মাত্র কয়েকজন তরুণ স্বপ্নচারী সমাজ পরিবর্তনের সংকল্প নিয়ে, আর্তমানবতার সেবাদানের জন্য গঠন করেছিলেন গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব। তারা হয়তো তখন জানতেন না গোলাপগঞ্জের তরুণ সমাজ এরকম একটি প্লাটফর্ম খুঁজছে। কিন্তু গঠন করতে দেরি হলেও একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মানের জন্য সচেতন তরুণ সমাজের ঐকবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি হতে দেরি হয়নি। যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন, হয়তো তাদেরকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেন এরকম একটি সুন্দর প্লাটফর্ম আরও আগে তৈরি করা হলো না!


রবিবার (১৭ অক্টোবর) গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাবের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পদার্পণ করছে ৮ম বর্ষে। ইতিমধ্যে পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ পরিক্রমা। প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব ধারাবাহিকভাবে দেশ ও জাতির স্বার্থে, বিপন্ন মানবতার মুক্তির লক্ষে এবং গোলাপগঞ্জবাসীর বিভিন্ন দাবীদাওয়া নিয়ে সৃজনশীল কাজ করে আসছে প্রতিটি পাড়ামহল্লায়। জাতীয় দিবস পালন, বিভিন্ন বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, দরিদ্র্য মানুষদের সহযোগিতা, ইফতার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ, ত্রাণ সামগ্রীসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা, শীতবস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় ক্যাম্পিংসহ এরকম অসংখ্য কর্মসূচি ক্লাবের নিত্যদিনের কাজ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হচ্ছে অসহায় মানুষের রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়া। জীবন ঝুঁকি নিয়ে সহস্রাধিক মানুষকে রক্ত জোগাড় করে দিয়ে স্থান করে নিয়েছে তাদের অন্তরে।

বহির্বিশ্বে যখন করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছিলো, ঘর থেকে বের হওয়া যখন প্রায় অসম্ভব ছিলো। তখন গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব বিবেকের তাড়নায় বসে থাকে নি। যেন দায়বদ্ধতা ছিলো এ সমাজের কাছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নগদ অর্থ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে ছুটছিল মানুষের ঘরে ঘরে কাদামাটি মাড়িয়ে। করোনা সংক্রমণে বেকার হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কয়েক ধাপে তখন তারা খাদ্যসামগ্রী ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে। গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে ফ্রী সবজি বাজার করে মানুষের শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিছু মানুষ কিছু সময়ের জন্য হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছিল। বিনামূল্যে কয়েকদিনের সবজি সংগ্রহ করার সুযোগ হয়েছিল তাদের। মানুষের জন্য গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাবের সর্বশেষ প্রচেষ্টা ছিলো করোনা রোগীদের ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিয়ে মানুষের অক্সিজেনের চাহিদা লাঘব করা, সবাই যখন অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করেছিলো গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাবের সকল সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে তারা গোলাপগঞ্জে রাতদিন এক করে মানুষকে সেবা দিয়েছে।

প্রিয় গোলাপগঞ্জবাসী! আপনাদেরকে একটি আনন্দের খবর দিতে চাই। আপনাদের ভালোবাসার সার্টিফিকেটও আমরা ইতিমধ্যে অর্জন করতে পেরেছি। কাজের ধারাবাহিকতা আর সক্রিয়তার কারণে খুব অল্প সময়ে আমরা ইতিমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধন লাভ করেছি। গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাবের পরিচালনার স্বচ্ছতার কারণে আবেদনের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সরকার আমাদের নিবন্ধন প্রদান করে। গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ইংরেজি সালে সিলেট সমাজসেবা কার্যালয় আমাদের এ নিবন্ধন প্রদান করে। যার নিবন্ধন নং সিল-১৩৪১/১৯।

৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন চেতনায় প্রস্ফুটিত হউক গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব। কাজের দ্বারা অব্যাহত রাখতে অতীতের ন্যায় সকলের দোয়া, পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এ আশা প্রত্যাশা করছি।

পরিশেষে ক্লাবের সকল সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী, উপদেষ্টাসহ সবাইকে ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আসুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। সংকল্প করি... ‘আমি পরিবর্তন হই, সমাজ পরিবর্তন করি’।

 

লেখক: হুমায়ুন কবির রুবেল, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব