অস্তিত্ব হারাতে বসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে গ্রাহকদের মনে। বিনিয়োগের টাকা ফিরে পাওয়ার আশা যারা ছেড়েই দিয়েছিলেন এমন শত শত গ্রাহক এখন নড়েচড়ে বসেছেন। প্রতিষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত করতে হাইকোর্ট গঠিত কমিটির কারণে তাদের মধ্যে এই আশা দেখা দিয়েছে।

গতকাল সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইভ্যালি পরিচালনা করতে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন, সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, সাবেক সচিব মাহবুবুল কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন শামীম আজিজ খান।


এই কমিটি গঠনের পর ইভ্যালির অনেক গ্রাহক তাদের আশার কথা জানান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাসান ফেরদৌস ইভ্যালি থেকে মোটরসাইকেল কিনতে দুই লাখ টাকার বেশি দিয়েছিলেন। সংকটে পড়া ইভ্যালি থেকে সেই টাকা ফেরত পাবেন এমন আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তিনি জানান, এই কমিটি গঠনের ফলে তিনি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াবে এবং গ্রাহকেরা টাকা ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস তার। একই আশাবাদের কথা জানান আরও কয়েকজন গ্রাহক।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগকারী ভুক্তভোগীদের আইনজীবী এএম মাসুম জানান, এই কমিটি শুরুতেই ইভ্যালির অবস্থা সম্পর্কে একটা অডিট করবে। তাদের কাছে দায় দেনার পরিমাণ হিসাব, কত অর্থ তাদের কাছে ভোক্তাদের পাওনা, তাদের কত সম্পদ আছে এই পুরো বিষয়টা অর্থাৎ কোম্পানিটি কী অবস্থায় আছে সেটার একটা খতিয়ান দাঁড় করাবেন।

যে দেনা রয়েছে কোম্পানিটির তা কীভাবে পরিশোধ করা যাবে, কোম্পানিটি আদৌ আর পরিচালনা করা সম্ভব নাকি বন্ধ ঘোষণা করা উচিত এসব বিষয়েও অডিটের পর বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। যদি কোম্পানিটি পরিচালনা করা সম্ভব হয় তাহলে এই বোর্ড সেটি পরিচালনা করবে। পরিচালনা করা সম্ভব না হলে কোম্পানিটি অবসায়ন করে দেওয়া হবে।

কমিটির প্রধান এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা চাইবো অন্যান্য চারজন বিজ্ঞ সদস্য যদি সবাই এগ্রি করেন, তাহলে এই ইভ্যালিকে একটি লাইয়েবল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে সর্বোত্তম। এট দ্যা সেইম টাইম যারা ওখানে টাকা বিনিয়োগ করেছেন তাদের টাকা হারিয়ে যাওয়া বা মার খাওয়ার একটা আশঙ্কা শুরু হয়েছিল। সেগুলো যতখানি সম্ভব ব্যবস্থা করে তাদের পয়সাগুলো ফেরত দেওয়ার কথা ভাবতে পারি। বাকি চারজন সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

কমিটির আলোচিত সদস্য মাহবুবুল কবীর মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এত মানুষের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, সেটা পূরণে শক্তিশালী রূপরেখা দরকার হবে। এখনো সরকারের গেজেট হয়নি, টার্মস অব রেফারেন্স তৈরি হবে। তারপর কাজ হবে। ইনশাআল্লাহ একটা রাস্তা বের হবে এবং ভালো কিছু করা যাবে।’

মাহবুব মিলন বলেন, ‘কোনো কোম্পানি যদি এগিয়ে আসে তাহলে দাঁড় করানোর রাস্তা বের হয়ে আসবে। প্রতারিত গ্রাহকের টাকা নিয়ে যা হয়েছে একটা রাস্তা তো বের করতে হবে।’

ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডারের পর অর্থ পরিশোধ করে পাঁচ মাস পরও পণ্য ও টাকা না পেয়ে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন একজন গ্রাহক। গত মাসের মাঝামাঝি সময় ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে অর্থ আত্মসাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর ইভ্যালির অফিসগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি।

এর আগে জুলাই মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ইভ্যালি গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩০০ কোটি টাকার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এর আগে জানুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, পণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রে ইভ্যালি আইন ভঙ্গ করেছে।

নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যান গ্রেপ্তারের পর ইভ্যালির গ্রাহকরা অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে। সেজন্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যানকে মুক্তি দেয়া উচিত এই দাবিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। তবে এখন গ্রাহকেরা মনে করছেন, বিকল্প উপায়ে প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখার উদ্যোগে তাদের টাকা ফিরে পাওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হলো।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে


সূত্র : ঢাকাটাইমস