তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নামটিই যথেষ্ঠ। হানিফ সংকেত। উপস্থাপনার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি এতোটা জনপ্রিয় হতে পারেন, সেটা তাকে না দেখলে বিশ্বাস করাটা কঠিন। আজ নন্দিত এই টেলিভিশন ব্যক্তিত্বের জন্মদিন।

১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন হানিফ সংকেত। বিশেষ এই দিনে জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে তিনি হয়ে উঠলেন দেশের টিভি অনুষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় উপস্থাপক…


বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্থানে বড় হয়েছেন হানিফ সংকেত। ছোট বেলাতেই তার একটি বিশেষ প্রতিভা সবাইকে মুগ্ধ করত। সেটা হলো কথা বলা। নানা গল্প, বক্তব্য তিনি আকর্ষণীয়ভাবে বলতে পারতেন। প্রকৌশলে পড়াশোনা শেষে হানিফ সংকেত যোগ দেন বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানে।

চাকরি করলেও উপস্থাপনা নিয়ে একটা ভালোলাগা, ভাবনা হানিফ সংকেতের ছিল। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বিটিভিতে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। নাম ছিল ‘যদি কিছু মনে না করেন’। প্রয়াত উপস্থাপক ফজলে লোহানি বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অনুষ্ঠানটির দৃশ্য ধারণ করতেন। এই অনুষ্ঠানেই নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পান হানিফ সংকেত।

উপস্থাপনায় নিজের প্রতিভা বিকশিত করার পাশাপাশি পরিচালনার দিকটাও ওই সময়ে আয়ত্ব করে নেন তিনি। এর ফলে ১৯৮৯ সালে নিজেরই পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় শুরু করেন নতুন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। নাম দেন ‘ইত্যাদি’।

তখন তিন মাস পর পর ইত্যাদি প্রচার হতো বিটিভিতে। সমাজের নানা অসঙ্গতি, সমস্যা, ভালো দিক, অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তির গল্প উঠে আসত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটিতে। তবে যেই জাদুতে এটি দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়, সেটা হলো হানিফ সংকেতের উপস্থাপনার কৌশল। তার কথা বলার ভঙ্গিমা মুগ্ধ করে সবাইকে। ধীরে ধীরে ইত্যাদি হয়ে যায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। যা এখনো সাফল্যের সঙ্গে প্রচার হচ্ছে।

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হানিফ সংকেত দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে বহু শিল্পীকে খ্যাতি এনে দিয়েছেন। এই তালিকায় আছেন, অভিনেতা আব্দুল কাদের, আফজাল শরীফ, অমল বোস, শিল্পী আকবর প্রমুখ। এছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ সর্বপ্রথম ইত্যাদিতেই মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন।

ইত্যাদি ছাড়াও হানিফ সংকেতের কর্মক্ষেত্র বিশাল। তিনি বহু নাটক রচনা ও নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে ‘আয় ফিরে তোর প্রাণের বারান্দায়’, ‘দুর্ঘটনা’, ‘তোষামোদে খোশ আমোদে’, ‘বিপরীতে হিত’, ‘অন্তে বসন্ত’, ‘ফিরে আসে ফিরে আসা’, ‘শেষে এসে অবশেষে’, ‘তথাবৃত যথাকার’, ‘পুত্রদায়’, ‘কিংকর্তব্য’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘ভূত অদ্ভুত’, ‘শূন্যস্থান পূর্ণ’ উল্লেখযোগ্য।

অভিনয়েও সিদ্ধহস্ত হানিফ সংকেত। তিনি তিনটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এগুলো হচ্ছে- ‘আগমন’, ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’ ও ‘ঢাকা ৮৬’। এছাড়া তিনি ‘কুসুম’ নামে একটি নাটকেও অভিনয় করেছেন।

লেখক হিসেবে হানিফ সংকেতের পরিচিতি মোটা দাগে উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি বই প্রকাশ করে আসছেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আছে ‘শ্রদ্ধেয় রাজধানী’, ‘নিয়মিত অনিয়মিত’, ‘কষ্ট’, ‘চৌচাপটে’, ‘এপিঠ ওপিঠ’, ‘ধন্যবাদ’, ‘অকাণ্ড কাণ্ড’, ‘খবরে প্রকাশ’, ‘ফুলের মতো পবিত্র... ’, ‘প্রতি ও ইতি’, ‘আটখানার পাটখানা’, ‘বিনীত নিবেদন’, ‘হামানদিস্তা’, ‘রঙ্গ বিরঙ্গ’, ‘গণ্য মান্য সামান্য’ প্রভৃতি।

সামাজিক কার্যক্রমের জন্য হানিফ সংকেত ২০১০ সালে সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় মর্যাদা একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া ২০১৪ সালে তিনি জাতীয় পরিবেশ পদক লাভ করেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-১১


সূত্র : ঢাকাপোস্ট