পানিবন্দি অবস্থায় চলছে ভবদহ অঞ্চলের মানুষের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। এর মধ্যে কারো মৃত্যু হলে দাফন ও সৎকারে সৃষ্টি হচ্ছে চরম সমস্যা। এমনই এক সমস্যা ও করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যশোরের অভয়নগরের সীমান্তে ভবদহ অঞ্চলের হাটগাছা গ্রামে।

পানির মধ্যে নৌকার ওপরে মৃতদেহ রেখে সৎকার করতে হয়েছে। এমনি এক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে। অন্তিম যাত্রার এ ছবিটি যা রীতিমতো ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে।


শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ভোররাতে বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান হাটগাছা গ্রামের কালীপদ মন্ডল (৯২)। বসত-ঘরসহ চারপাশে পানি থাকায় মৃতদেহ রাখতে হয়েছে নৌকায়। আর সেই নৌকায় রেখে করতে হয়েছে সৎকার। মৃত কালীপদ মন্ডল হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মনোজ কান্তি মন্ডলের বাবা।

মৃত কালীপদ মন্ডলের ছেলে মনোজ কান্তি মন্ডল জানান, বসত-ঘরের বারান্দায় পানি। বাড়ির চারপাশে পানি থৈথৈ করছে। বাবা মারা যাওয়ায় একটি নৌকায় মৃতদেহ রাখা হয়েছে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা ও গ্রামবাসী মৃতদেহে পুষ্পঅর্পণ করেছি। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে সৎকারের সিংহভাগ কাজ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এভাবে বেঁচে থাকার থেকে মৃত্যু ভালো। এ জলাবদ্ধতার থেকে পরিত্রাণ হবে কবে? আমার বাবার মৃতদেহ সৎকার করতে হচ্ছে নৌকায়!

প্রসঙ্গত, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নামছে না। বৃষ্টি হলেই এলাকার বিলগুলো উপচে ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতার। গ্রামগুলোর হাজার হাজার বাড়ি পানিমগ্ন হয়ে আছে। অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় অনেক জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। পানীয় জলের সংকট প্রকট। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। কয়েক হাজার মাছের ঘের ও ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে মাচা করে থাকছে লোকজন। শত শত পরিবার উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/জিএসি-১৩


সূত্র : ঢাকা পোস্ট