দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাহাত হত্যাকান্ডের মূল হোতা শামসুদ্দোহা সাদীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গতকাল মঙ্গলবার তাকে কুষ্টিয়া জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সিআইডি হেডকোয়ার্টারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রাহাত হত্যাকান্ডের তদন্তের দায়িত্বও সিআইডি’র নিকট ন্যাস্ত করছে পুলিশ সদর দপ্তর।


দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল হাসান তালুকদার জানিয়েছেন, রাহাত হত্যা মামলার মূল আসামি সাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শুনেছি। পুলিশের একটি পৃথক ইউনিট তাকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার (আজ) এবিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। মামলার তদন্ত ভার সিআইডি’র নিকট হস্তান্তরের কথা রয়েছে বলে জানান ওসি।



আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কলেজ ছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাতের প্রধান খুনী ছাত্রলীগ নেতা শামসুদ্দোহা সাদী নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে রক্ষা করতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এজন্যে সে সিলেট থেকে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করে কুষ্টিয়া জেলায়। সাদীকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট মাঠে নামে। সিলেট মহানগর পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তের কাজ শুরু করে অন্যান্য সংস্থাও। তারা রাহাতের খুনীদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে সিআইডি’র একটি চৌকস দল সাদীর খোঁজ পায়। গতকাল দুপুরের পর কুষ্টিয়া জেলার একটি সীমান্ত এলাকা হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সিআইডি’র হাতে পাকড়াও হয় শামসুদ্দোহা সাদী।


সে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম টিকর পাড়ার মোবারক হোসেনের পুত্র। এরপরে সাদী গ্রেফতারের বিষয় সিলেট মহানগর পুলিশকে জানানো হয় বলে সূত্র জানায়।


রাতেই সাদীকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে সিআইডি’র একটি বিশেষ টিম কুষ্টিয়া পৌঁছে। পরে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় সিআইডি’র টিম। আজ বুধবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি হেডকোয়ার্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে শামসুদ্দোহা সাদী গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমে জানানো হবে বলে সিআইডি’র একটি সূত্র জানিয়েছে।

 
মেধাবী শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাহাত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, কারা কারা হত্যাকান্ডে ছিল, হত্যাকান্ডের কোনো মদদদাতা রয়েছে কিনা এসব তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।


এদিকে, রাহাত হত্যার প্রধান আসামি শামসুদ্দোহা সাদীকে গ্রেফতারের পর মামলার তদন্তভার সিআইডি’র নিকট হস্তান্তর করা হয়। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল হাসান তালুকদার জানান, সাদীকে গ্রেফতারের বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর হয়তো নথিপত্র সিআইডি নিয়ে যাবে।


জানা গেছে, শামসুদ্দোহা সাদী দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় কলেজে রাজনীতি কার্যক্রম শুরু করতে মরিয়া হয়ে উঠে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি কলেজটি রাজনীতিমুক্ত। কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে উচ্ছৃঙ্খলতার জন্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এরপর সাদীকে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করতে মৌখিকভাবে বলা হয়। কলেজের শিক্ষার্থীরা তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম না দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠতো সাদী। তাকে ‘ভাইয়া’ না ডাকলেও জুনিয়রদের রেহাই নেই। তার হাতে কলেজের কতজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছেন তার কোনো হিসেব নেই। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।


গত রোববার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে আরিফুল ইসলাম রাহাতের খুনীদের গ্রেফতার করতে আলটিমেটাম দেয় দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম খুনীদের গ্রেফতার না করলে আন্দোলনেরও হুমকি দেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের এই আলটিমেটামের দু’দিন পর মূল খুনীকে গ্রেফতার করলো সিআইডি। তবে, অন্য আসামিদের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।


গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের গেটের সামনে খুন হন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাহাত (১৮)। নিহত রাহাত দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের ধরাধরপুরের সৌদি প্রবাসী সুলাইমান মিয়ার একমাত্র পুত্র। এ ঘটনার পর কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চন্ডিপুলে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩ দিন পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করে। তাৎক্ষণিকভাবে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। হত্যাকান্ডের পরদিন শুক্রবার রাতে নিহত রাহাতের চাচা শফিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।


এজাহারে উল্লেখ করা ৩ আসামী হচ্ছে, মোগলাবাজার থানার সিলাম টিকর পাড়ার মোবারক হোসেনের পুত্র শামসুদ্দোহা সাদী, সিলাম পশ্চিম পাড়ার জামাল উদ্দিনের পুত্র তানভীর আহমদ ও দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের মৃত গৌছ মিয়ার পুত্র ওলিদুর রহমান সানী।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ শাদিআচৌ-০১