ভারতে মটরশুটি পাচারকে নিয়ে গোয়াইনঘাটের যুবক অপহরণ, মুক্তিপন দাবী। জৈন্তাপুর থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম উদ্ধার, ২ অপহরণকারী আটক।

সোমবার ৫০ বস্তা মটরশুটি ও ১টি মটরসাইকেল বিএসএফ আটক করে।


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অপহরনকারীরা মুলত দীর্ঘ দিন হতে বাংলাদেশের আমদানীকৃত মটরশুটি সীমান্তে বিভিন্ন চোরাইপথ দিয়ে ভারতে পাচার করছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ৫০ বস্তা মটরশুটি ও ১টি মটরসাইকেল বিএসএফ আটক করে। মটরশুটি আটকের পর থেকে চোরাকারবারী দলের সদস্য জৈন্তাপুর উপজেলার বাউরভাগ গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আলমগীর হোসেন(২৫) গোয়াইনঘাট উপজেলার আমস্বপ্নপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ উরফে সোনা মিয়ার ছেলে মো. আবু সাইদ (১৯) কে সন্দেহ করে আসছে এবং অপহরনের ফন্দি করে। একপর্যায় অপহরনকারীরা ২৬ অক্টোবর সকাল ৯টার সময় অপহরনকারী আলমগীর হোসেন ও মো. আবু সাঈদ তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে আবু সাইদকে কল করে সিলেট তামাবিল মহাসড়কের নলজুরী বাজারে নিয়ে আসে ৷ সরল বিশ্বাসে ও পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মো. আবু সাইদ রাস্তায় আসে।

রাস্তায় আসার পরপর চোরাকারবারী ও অপহরনকারী আলমগীর হোসেন (২৫), সুমন আহমদ (২০), শাহিন আহমদ (৩৫), আব্দুল মিয়া (১৯), জলিল মিয়া (১৮) মিলে মোঃ আবু সাইদকে অতর্কিত ভাবে মারপিট করে তাহাদের সাথে থাকা অবৈধ ব্যাটারী চালিত টমটম গাড়ীতে টানা হেছড়া করিয়া ২টি মোটর সাইকেলের পাহারায় অপহরন করে নিয়ে আসে। একপর্যায় তারা আবু সাইদকে জৈন্তাপুর মডেল থানার পিছনে সড়ক ও জনপথের জৈন্তাপুর ডাক বাংলোর ভিতরের গাছ বাগানে আটক করিয়া রাখে। এবং অপহরনকারী আলমগীর হোসেন হুমকি দিয়া বলে তাহার চোরাচালানকৃত ৫০ বস্তা মরটশুটি ও মোটর সাইকেল মূল্য বাবত ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। দিতে না পারলে খুন করিব।

অপরদিকে অপহরনকারীরা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে আলমগীর হোসেন ভিকটিম মো. আবু সাইদের মাকে মোবাইল ফোনে জানায় তার ছেলেকে অপহরন করেছে। ছেলে মো. আবু সাঈদকে জীবিত পেতে হলে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়ে জৈন্তাপুর থানার পিছনে সিএনবির বাংলাোর গাছ বাগানে নিয়ে আসতে বলে।

এই কথা শুনিয়া আবু সাইদের মা দ্রুত তার আত্মীয় স্বজনকে নিয়া জৈন্তাপুর থানা পুলিশের সহায়তায় বিকাল সাড়ে ৩টায় জৈন্তাপুর থানার পিছনে সিএনবি বাংলোর গাছবাহান হতে গুরুত্বর আহত অবস্থায় মো. আবু সাঈদকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশংকাজনক দেখিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রেরণ করেন।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল হতে অপহরণকারী উপজেলার বাউরভাগ মল্লিফৌদ গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (৩৫) কেন্দ্রী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সুমন আহমদ (২০) কে আটক করতে সক্ষম হলেও বাকী অপহরনকারীরা পালিয়ে যায়। ভিকটিমের বড় ভাই আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে রাত সাড়ে ১০টায় জৈন্তাপুর মডেল থানায় অপহরনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, চক্রটি এলাকার প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে দীর্ঘ দিন হতে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। ইতোপূর্বে এচক্রের সদস্যরা ডিবির হাওর এলাকা দিয়ে ভারতের মুক্তাপুর বস্তির বাসিন্ধা রাবিশ খাসিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে আসে। পরে থানা পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানে ভারতীয় খাসিয়াকে উদ্ধার করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। এই চক্রের চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার কারনে জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। শান্তি প্রিয় সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।

জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম দস্তগীর আহমদ জানান, খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ অপহৃত আবু সাইদকে গুরুত্বর আহতবস্থায় উদ্ধার করি এবং দুই অপহরনকারীকে আটক করি। আবু সাইদের ভাই বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটি মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হবে। বাকী অপহরনকারীদের আটকের জন্য অভিযান চলছে। ২৭ অক্টোবর বুধবার আটককৃত অপহরনকারীদের আদালতে প্রেরণ করা হবে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এমএইচ/এসডি-১৫