পশ্চিমবঙ্গের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিরোধীদের বিপর্যস্ত করে চারটিতেই জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। গত ৩০ অক্টোবর দিনহাটা, শান্তিপুর, খড়দহ ও গোসাবা-এই চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২ নভেম্বর ছিল তার গণনা। কিন্তু চারটি কেন্দ্রেই কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গেল রাজ্যের প্রধান বিরাধী দল বিজেপি। প্রতিটিতে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা।

চার কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল কেন্দ্রটি হল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ‘খড়দহ’ বিধানসভার কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয় তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী শোভনদেব চ্যাটার্জি। তিনি বিজেপির প্রার্থী জয় সাহাকে ৯৩,৮৩২ ভোটে পরাজিত করেন।


অন্যদিকে ‘গোসাবা’ কেন্দ্রেও বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের প্রার্থী সুব্রত মন্ডল ১,৪৩,০৫১ ভোটে জয়ী হয়েছেন। গত মার্চ-এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে এই দুই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থীরা জয় পেলেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুই জয়ী প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন জরুরী হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরচিত ‘শান্তিপুর’ ও ‘দিনহাটা’ বিধানসভা কেন্দ্র দুইটিতেও ভরাডুবি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। দুইটি আসনই বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। গত নির্বাচনে ওই দুই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীরা জয় পেলেও নিজেদের সাংসদ পদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিক। কিন্তু উপনির্বাচনে দুইটি কেন্দ্রেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে তৃণমূলের প্রার্থীরা। শান্তিপুর কেন্দ্রে ৬৪,৬৭৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী ব্রজ কিশোর গোস্বামী এবং দিনহাটা কেন্দ্রে ১,৬৪,০৮৯ ভোটে তৃণমূলের টিকিয়ে জয় পেয়েছেন উদয়ন গুহ। এই জয়ের ফলে রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি পেল। রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভায় আসনের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে এল ২১৭ টি আসন। অর্থাৎ তাদের বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে হল ২১৭।

অন্যদিকে বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি ৭৭ আসনে জয় পেলেও পরবর্তীতে দুই বিধায়কের পদত্যাগ ও পাঁচ বিধায়কের তৃণমূলে যোগদানের ফলে গেরুয়া শিবিরের বিধায়ক সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০।

এদিকে চারকেন্দ্রের ফলাফলকে মানুষের জয় বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল প্রধান ও রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ট্যুইট করে দলের জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি লিখেছেন ‘চারজয় জয়ী প্রার্থীকেই আমার আন্তরিক অভিনন্দন। এই জয় মানুষের জয়। এটা দেখিয়ে দিল যে বাংলা সবসময় মিথ্যা প্রচার ও ঘৃণার রাজনীতির বদলে উন্নয়ন ও ঐক্যকে বেছে নেবে। মানুষের আর্শীবাদে আমরা বাংলাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

যদিও এই জয়ের পর তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার অভিযোগ বিজেপির প্রার্থীদের ঠিকমতো প্রচারণা করতে দেওয়া হয়নি। ওই চার কেন্দ্রেই তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়েছে। সেই কারণেই মানুষ ভোট দিতে পারেনি। যারা বিজেপিকে ভোট দেয় তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি।। এরপরই তার কটাক্ষ ‘পরিস্থিতি যা তাতে দেখা যাচ্ছে, এরপর কোনও ভোট হলে কেবলমাত্র একটি দলই প্রার্থী দেবে। তৃণমূল ১০০ শতাংশ বোট পাবে। তৃণমল বরাবর চেয়েছে যে বিরোধী শূন্য রাজনীতি। আর পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে


সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন