নামাজ ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত। ঈমানের পরেই যার স্থান। আর নামাজের সেজদার মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহর একান্ত কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু অনেকের সেজদা হয় খুবই দ্রুত। আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার আবেগ-অনুভূতি পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আল্লাহকে একান্ত আবেগ-অনুভূতির মাধ্যমে কাছে পাওয়ার উপায় কী?

আল্লাহকে কাছে পাওয়ার এবং তার কাছে নিজের আবেদন জানানোর একমাত্র মাধ্যম নামাজের সেজদা। এ সেজদা যেন দ্রুত না হয়। সেজদায় গিয়ে যেন সব বলা যায়; সেভাবে সেজদা আদায় করার কিছু নিয়ম বা কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। তাহলো-


১. আল্লাহর বড়ত্বের কাছে নিজের তুচ্ছতার অনুভূতি

সেজদায় তাসবিহ পড়ার সময় মুহূর্তের জন্য ভাবুন তো! আপনি কার সামনে নাক ও মাথা ঠেকিয়েছেন? আপনার রবের বড়ত্ব, দয়া-মায়ার কথা চিন্তা করুন। পাশাপাশি নিজের তুচ্ছতা ও গুনাহের কথা চিন্তা করুন। তখন আপনার অনুভূত হবে- আল্লাহর বড়ত্ব ও মমত্বের কাছে আপনি কতটা তুচ্ছ। সেজদায় গিয়ে এ অনুভূতিটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যা আপনাকে আল্লাহর একান্ত আনুগত্যের এমন স্বাদ দেবে যে, আপনি সেজদা থেকে উঠতে চাইবেন না।

২. আল্লাহর সান্নিধ্যের অনুভূতি

নামাজের মধ্যে সেজদা এমন এক ইবাদত; যা বান্দাকে রবের একেবারেই কাছাকাছি করে দেয়। তখন রবের সঙ্গে বান্দার কোনো পর্দা থাকে না। আপনি আল্লাহর সান্নিধ্যে আছেন- এ অনুভূতি হৃদয় ও মনে জাগ্রত করুন।

৩. ব্যথিত অন্তরের চাওয়া

দীর্ঘ বিরতির পর আপনজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে হৃদয়টা যেমন আবেগতাড়িত হয়ে ওঠে। ঠিক সেজদায় গিয়ে এ অনুভূতির কল্পনা করুন। আল্লাহ কত আপন! অথচ আপনি তারই অবাধ্যতায় লিপ্ত। তারপরও আল্লাহ আপনার প্রতি তার রিজিক বন্ধ করে দেননি। তার সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত করেননি। মুহূর্তের জন্য তার বাতাস-পানির প্রবাহ থেমে থাকেনি। ব্যথিত অন্তরে এসব অনুভূতির কথা ভাবুন। সেজদায় পাবেন জান্নাতি আবহ।

৪. গুনাহ থেকে মুক্তির অনুভূতি

বান্দা যখন জমিনে কপাল ঠেকায়, তখন থেকেই তার গুনাহ ঝড়তে থাকে। নামাজের সেজদায় এ অনুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করুন যে, নিজের মাথা থেকে গুনাহের বোঝা ঝড়ে গেছে। হালাকা হয়ে উঠেছে পুরো মন ও শরীর। এরকম প্রতিটি সেজদাই আপনাকে দেবে স্বর্গীয় অনুভূতি।

৫. সেজদা হোক শয়তানকে পরাজিত করার আনন্দ

সেজদা হোক আল্লাহকে কাছে পাওয়ার একান্ত আনন্দ। শয়তানের সব প্ররোচনা ও কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থেকে আবেগ ও ভালোবাসায় আল্লাহ সেজদায় পরম আনন্দ অনুভব করে মুমিন। কারণ হাদিসে এসেছে-


‘বনি আদম যখন সেজদা দেয়, তখন শয়তানই সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়।’
সুতরাং আল্লাহে সর্বোচ্চ ভালোবাসার জন্য হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি আবেগ দিয়ে সেজদা করতে শয়তান পরাজিত করাই হলো মুমিনের অন্যতম কাজ। তাই শয়তানকে পরাজিত করে সেজদা দিতে পারা মুমিনের জন্য সর্বোত্তম কাজ।

৬. সেজদায় প্রকাশ পাবে আল্লাহর পরিপূর্ণ আনুগত্য

সেজদায় মুমিন মুসলমানের অনুভূতি হবে এমন যে, সে শুধু আল্লাহকেই সেজদা করছে। মুমিনের জীবন-মরণ সবই মহান আল্লাহর জন্য। সেজদায় পূর্ণ আনুগত্যের সঙ্গে মুমিন আল্লাহ এভাবে ডাকবে-


‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ অর্থাৎ ‘পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই আল্লাহর যিনি সবচেড়ে বড় ও মহান’।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সেজদায় যাওয়ার পর এ অনুভূতিগুলো নিজের মন-মস্তিষ্কে জাগিয়ে তোলা। আল্লাহর ভালোবাসায় নিজেদের রঙিয়ে তোলা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার ভালোবাসায় পরিপূর্ণ আনুগত্যের সঙ্গে সেজদা করার তাওফিক দান করুন। সেজদায় পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/জিএসি-১১


সূত্র : জাগো নিউজ