দখল ও বর্জ্যের চাপে বিপর্যস্ত সিলেটের সুরমা নদী। ক্রমশ ভরাট হচ্ছে বলে বর্ষা মৌসুমে বন্যা দেখা দিচ্ছে সিলেটের নিম্নাঞ্চলে। এ ছাড়া দখল-দূষণে জেলার নদ-নদী, খাল-বিলগুলোও দিনে দিনে বিলীন হচ্ছে।

উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ জেলার ভেতর প্রবাহিত সুরমার দুই পাড় দখল করে স্থাপনা গড়েছে শতাধিক দখলদার। সেই সঙ্গে নগরীর অধিকাংশ বস্তির শৌচাগারের পাইপ সরাসরি নামানো হয়েছে নদীতে।


সিলেট নগরীর কুশিঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, কালিঘাট, ছড়ারপাড়, তোপখানা, চাঁদনীঘাট ও কদমতলী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে সুরমার বিপর্যস্ত চেহারা। নদীর গভীরতা কমতে কমতে অনেক জায়গায় চর জাগতে দেখা গেছে। সুরমা থেকে উৎপত্তি হওয়া বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিয়া নদীর দখলদারদের উচ্ছেদে জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান একাধিকবার পরিদর্শন করে ঘোষণা দিলেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘পাউবোর কাছে অবৈধ দখলদারদের যে তালিকা রয়েছে সেটা ধরে অভিযান চালানো হবে। আপাতত বাসিয়াকে কেন্দ্র করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। আমাদের প্রস্তুতিও আছে। শিগগিরই অভিযান চালাবো।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রায় ২৪৯ কিলোমিটারের সুরমার ১১০ কিলোমিটার পড়েছে সিলেট জেলায়। নদী ভরাট, দূষণ ও দখলে পুরো নদীটিই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ ছাড়া সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালিঘাট অংশের সুরমা নদীর অবস্থাও ভয়াবহ। প্রতিদিনই দোকান ও বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে।

এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমার চাঁদনীঘাট এলাকার গাড়ির গ্যারেজের অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনে ৪৫০ মিটার, গোয়াইনঘাটে ১০০, বালাগঞ্জে ২৬০, গোলাপগঞ্জের বুধবারী বাজারে ৩০০, কানাইঘাটে ২৫০, গাছবাড়িতে ৩০০, বিশ্বনাথে এলাকায় ৬০, লামার টুকেরবাজারে ১০, ফেঞ্চুগঞ্জে ৯০০ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ মিটার তীর অবৈধ দখলে রয়েছে। নদীর জায়গা দখল করে বাড়িঘর করা হচ্ছে। পাউবোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীর দখল করে চালের আড়ত, কাপড়-জুতার দোকান, সেলুন, ফার্নিচার, ফাস্টফুড ও মাংসের দোকান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার সংগঠনের আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘সুরমার দখল উচ্ছেদ ঢাকঢোল বাজিয়ে শুরু হলেও অভিযান থেমে আছে। উদ্ধারকৃত জায়গা পুনরায় দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ আছে। সিলেটের আরও অনেক নদী দখলের কারণে বিলীন হওয়ার পথে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ বাজারের কাকেশ্বরী নদী ও বিয়ানীবাজার উপজেলার লুলা নদীও আজ নিশ্চিহ্ন হয়েছে দখলের কারণে। এসব নদী রক্ষায় সরকারের যেন কোনও ভ্রুক্ষেপেই নেই।’

সেভ দ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেরিটেজের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী বলেন, ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দখলদারদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তা পূর্ণাঙ্গ নয়। তালিকার বাইরেও অনেক দখলদার রয়ে গেছে।’

সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকায় সুরমার পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে জানিয়ে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ না মানুষ সচেতন হচ্ছে ততক্ষণ কোনও কাজই সফল হবে না। সবার আগে মানুষের দূষণ করার বদভ্যাসটা বদলাতে হবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা জানান, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নদী, খাল, পুকুর ভরাট ও দূষণ করা যাবে না উল্লেখ থাকলেও তা কেউ মানছেন না। যারা এসব আইন প্রয়োগ করবেন তারাই নীরব।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম / পিটি / ডি.আর