সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্তটিকে অমানবিক ও অযৌক্তিক উল্লেখ করে এবং বিষয়টি পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রাক্তন প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

রবিবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন- পানির অপর নাম জীবন। এটা সবাই জানেন। কিন্তু পানির দাম বাড়িয়ে এখন মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাহেব।


করোনা মহামারিকালে সিলেটের নাগরিকরা যখন তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছেন, আয়-রোজগার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে তখন সিলেটে পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অমানবিক, অযৌক্তিক ও গণবিরোধী-যা নগরবাসীর জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। একেতো করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে নয়, এর মাঝে নতুন ভেরিয়েন্ট অমিক্রন মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সরকার যেখানে অমিক্রনের সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রস্তুতি হিসেবে ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা, রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা জোরদার, জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে আমাদের মেয়র সাহেব কিভাবে মানুষের যন্ত্রণা বাড়ানো যায় সেই ধান্দায় আছেন।

পানির দাম না বাড়িয়ে শুধু যদি সিটি কর্পোরেশনের ভেতরের দুর্নীতি কমানো যায়, তাতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। নগরবাসীও উপকৃত হবে।

এই পানির বিল বাড়ানোর কারণ হিসেবে হাস্যকর যুক্তি দেখানো হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, পানি উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পানি সরবরাহ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি মাসে এ খাতে সিটি কর্পোরেশনকে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। পানির সিস্টেম লস কমানোর লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রত্যেক সংযোগে মিটার স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। মিটার স্থাপনে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। পানি সরবরাহ খাতে সিসিকের কাছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। ফলে আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে ০.৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, ০.৭৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা এবং ১ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানলাম, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে ০.৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ১০০ টাকা, ০.৭৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ২০০ টাকা এবং ১ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ৯০০ টাকা।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে ০.৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ২০০ টাকা, ০.৭৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ৩০০ টাকা এবং ১ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ৬০০ টাকা।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনে আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে ০.৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ১০০ টাকা, ০.৭৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ২০০ টাকা এবং ১ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ৩০০ টাকা।

এবং ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে ০.৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ১২০ টাকা, ০.৭৫ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ১৫০ টাকা এবং ১ ইঞ্চি ডায়ামিটারের বিল ২২৫ টাকা।

এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যুতের দাম, উৎপাদন ও সরবরাহ খরচ কি শুধু সিলেটেই বেড়েছে। সারাদেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন যে হারে পানির বিল নির্ধারণ করেছে সিলেটে কেন এর ৪/৫ গুন বেশী নিতে হবে? এই প্রশ্ন আজ নগরবাসীর মনে তৈরি হয়েছে।

আমি মেয়র সাহেবের এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করে নগরবাসীর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জোর দাবি জানাচ্ছি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডিজেএস / ডি.আর