সিলেটের একটি বাণিজ্য মেলাকে নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিলো না। ছিলো আইনি লড়াইও। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে সাঙ্গ করতে হচ্ছে সেই বাণিজ্য মেলার কার্যক্রম।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) এক শুনানিতে মেলার সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত। বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি। 


এদিকে, আদালতের নির্দেশের পর সেই মেলা ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে বলে সিলেটভিউ-কে বিসিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, স্থানীয় সর্বস্তরের মানুষের ঘোর আপত্তি, ক্রীড়াপ্রেমী ও খেলোয়াড়দের জোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর উদ্যোগে এবং তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস)-এর ব্যবস্থাপনায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরের আই ব্লকের ‘শাহজালাল উপশহর একাডেমি’ সংলগ্ন খেলার মাঠে মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পণ্য মেলার আয়োজন করা হয়। গত ৬ নভেম্বর এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

মেলায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলো বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসা বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন অ্যান্ড জামদানি সোসাইটি। মেলার নামে চলতি বছরের মার্চে অনুমোদন নেওয়া হলেও গড়ায় দীর্ঘ ৮ মাস। করোনার কারণে মেলার আয়োজন করা না গেলেও ৮ মাসের বেশি সময় ধরে বিশাল এই খেলার মাঠটি দখলে রাখা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমাননের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা করতে চেয়েছিলো বিসিক। পরে করোনার কারণে যথাসময়ে মেলা করা সম্ভব না হলেও মাঠটি দখলে রাখেন আয়োজকরা। সে সময় থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছিলেন স্থানীয় এলাকাবাসী। উপশহরস্থ এই বিশাল মাঠটির মালিক জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। করোনাকালীন মেলার অনুমোদন না থাকলেও গৃহায়ন কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মাঠে মেলার সরঞ্জাম ফেলে রেখে দখলে রাখা হয়। এর ফলে বিশাল এই মাঠে বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার ক্রীড়া অনুশীলন।

এ অবস্থায় মাঠে থাকা টিনশেড, সরঞ্জামাদিসহ অন্যান্য অবকাঠামো সরাতে সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে আবেদন করেন শাহজালাল উপশহর একাডেমির সভাপতি এমএ ওয়াদুদ। এতে ফল না পেয়ে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পর ওই মাঠ থেকে মেলার জন্য রাখা সব ধরনের অবকাঠামো ৩০ দিনের মধ্যে অপসারণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের সেই নির্দেশনার বিপরীতে মেলা কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে পাল্টা রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল ডিভিশন গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এমএ ওয়াদুদের রিটের নির্দেশনা স্থগিত রাখেন। গত ৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথার ছিলো। কিন্তু সেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয় আজ সোমবার (৬ ডিসেম্বর)।

আজকের শুনানিতে মেলা কর্তৃপক্ষে আইনজীবীরা সময় বাড়ানোর আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত সে আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে এবার ভেঙে দিতে হচ্ছে বিতর্কিত সেই বাণিজ্য মেলা।

এদিকে, সময় না বাড়ানোর ফলে মেলাটি মেয়াদ শেষে গুটিয়ে না নিলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সেটি ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

তবে আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই মেলা গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে- এমনটি জানিয়েছেন বিসিক সিলেট জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) ম সুহেল হাওলাদার।

তিনি সোমবার বিকেলে সিলেটভিউ-কে বলেন, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আজ (সোমবার) মধ্যরাতের আগেই মেলার কার্যক্রম শেষ করা হবে।

উল্লেখ্য, উপশহরের একমাত্র খেলার মাঠটিতে মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন স্থানীয়রা। মাঠের পরিবেশও নষ্ট করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সেই সাথে খোঁড়াখুঁড়ি করে মাঠটি খেলাধুলার অনুপযুক্ত করে ফেলা হয়েছে। যে মাঠটি নিয়মিত খেলাধুলা, হাঁটা, শরীরচর্চার জন্য সব পর্যায়ের শিশু-কিশোরসহ এলাকার জনসাধারণ ব্যবহার করতেন- সেই মাঠটিতে এ ধরনের মেলা আয়োজনের কারণে খেলাধুলা ও বেড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এলাকার শিশু-কিশোরসহ খেলোয়ারড়বৃন্দ খুবই হতাশ হয়ে পড়েন। সেই সাথে মেলার কারণে এলাকাবাসীসহ পথচারীরা নানা সমস্যায় ভোগেন।

এ বিষয়ে গত ৩ ডিসেম্বর ‘‘সিলেটে ‘সরকারি মেলায়’ ৮ মাস পার!’’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সিলেটে শুরু হয় তোলপাড়। ঝড় ওঠে নিন্দার। খেলার মাঠে এমন মেলার সমালোচনা করেন সচেতন মহল। অবশেষে আদালতের নির্দেশে সেই মেলার কার্যক্রম সাঙ্গ হচ্ছে সোমবার। আর এই খবরে স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম