সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আরও প্রায় দেড় বছর। এই দেড় বছরে দলের হাইকমান্ডের কাছে নিজেদের ‘যোগ্য’ মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাংগঠনিক জোরদার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতা।

তারা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  ২০ নম্বর ওয়ার্ডের টানা ৪ বারের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। এ তিনজনই গেল সিসিক নির্বাচনে  দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।


দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে ৫ জন নেতার নাম প্রস্তাব করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা ছিলেন- মহানগরের তৎকালীন সভাপতি মরহুম বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আলওয়ার আলাওর, অধ্যাপক জাকির হোসেন ও তৎকালীন শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। তবে দল মূল্যায়ন করে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে। তিনি পান নৌকা প্রতীকে সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হেরে যান বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে।

চলতি বছরে মহামারি করোনায় অক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরান তৃণমূল থেকে ওঠে এসে জনতার কামরানে রূপ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের শেষ দুই দুই নির্বাচনে রাজনৈতিক গ্যাড়াকলে চাপা পড়ে। সিসিক মেয়র নির্বাচনে ২০০৩ ও ২০০৮ সালে টানা দু’দফা নির্বাচিত হওয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের নেপথ্য সিলেটে দলীয় নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই ঘটেছে বলে তখন আলোচিত হয়। এর ফলে মেয়র পদ হারান কামরান, আর ভরাডুবি হয় আওয়ামী লীগের অস্থিত্বের প্রতীক নৌকার।

গত সিসিকি নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে জানা যায়, আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজের কেন্দ্রে দুটি কেন্দ্রে ধানের শীষ ১৪৫২ ভোট পেলেও নৌকা পায় মাত্র ৬৫৩ ভোট। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত লুৎফুর রহমানের কেন্দ্রে নৌকা ২৬০ ভোট পেলেও ধানের শীষ পায় ৫০৯ ভোট। আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের কেন্দ্রে ধানের শীষ ১ হাজার ৩০৮ ভোট পেলেও নৌকা পায় মাত্র ৫৬৬ ভোট। এছাড়া আসাদ উদ্দিনের চন্দনটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৌকা ৪৯২ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়। অধ্যাপক জাকির হোসেনের বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গত দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় ঘটে।

এদিকে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সবকটি কেন্দ্রে আনারস প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে আজাদের দায়িত্বে ছিল ২০, ২১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড তিনটি ওয়ার্ডে নৌকা ১৭ হাজার ভোটে বিজয়ী হলেও সার্বিক ফলাফলে ৬ হাজার ২০১ ভোটে হেরে যায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক।

আগামী সিসিক নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, গত নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক চেয়েছিলাম। এবারও চাইবো। রাজনীতি করি হিসেবে সবসময় নগরবাসীর পাশে থাকার প্রানান্তকর চেষ্টা করি। আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে নগরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই। তাই আমার চাওয়া- এই নগরীতে হোক পরিকল্পিত উন্নয়ন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয় আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে চাই।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, গত সিসিক নির্বাচনের সময় তিনি দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলীয় মনোনয়নও চেয়েছিলেন। নেত্রী তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে এবার তাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন। তিনি সেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে চান। সততা আর নিষ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে তিনি জনগণের সেবা করতে চান।
জাকির বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি তার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেন তিনি মেয়র সাহেব কিংবা নগরপিতা হতে চান না- তিনি হতে চান একজন স্বচ্ছ মানবসেবক।

গত নির্বাচনে নৌকার পরাজয়ে দলীয় কোন্দল কী নেপথ্যের কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাকির বলেন, কী কারণে গত নির্বাচনে নৌকার পরাজয় ঘটেছে তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ চিহ্নিত করেছে। এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

অপর মেয়র প্রার্থী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, আমার বিশ্বাস- আমার নির্বাচনী এলাকায় নৌকা ও দলীয় প্রার্থীর ফলাফলের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে নেত্রী আমার প্রতিই ভরসা রাখবেন। আজাদ বলেন, গত দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমার ওয়ার্ডের সবকটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। টানা ৪ বার মানুষ আমাকে ভালোবেসে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। গত নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। তবে নেত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে ২০, ২১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ হাজার ভোটে বিজয়ী করে প্রমাণ রেখেছি, আমার কাছে সবার ঊর্ধ্বে নেত্রীর পছন্দ ও সিদ্ধান্ত।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / শিপু / ডালিম