দু’জন সমসাময়িক কিংবদন্তী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড় গফ হুইটলামের জীবন, কর্ম ও রাজনৈতিক আদর্শের ওপর অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হুইটলাম ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন ক্যানবেরা ও কনস্যুলেট জেনারেল সিডনি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। হুইটলাম ইনস্টিটিউটে মাসব্যাপী গফ হুইটলাম এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে, যা জানুয়ারি পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পিটার শেরগোল্ডের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যারেথ ইভানস স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর বার্নে গ্লোভার মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


এসময় বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ এবং এক্ষত্রে তাঁর পররাষ্ট্রনীতির অবদানের কথা উল্লেখ করেন ড. মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবিকতা, বন্ধুত্ব এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিষয়ক বঙ্গবন্ধু যে বার্তা দিয়ে গেছেন তার মাধ্যমে সমসাময়িক বিশ্বের অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন এবং দু’নেতার জীবন ও কর্ম উদযাপনের মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দু’দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মুল্যবোধ বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পারিক ঘনিষ্ঠতা আরো বৃদ্ধি পাবে।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যারেথ ইভানস বলেন, বঙ্গবন্ধু ও হুইটলামের পাস্পারিক যোগাযোগ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংসদীয় গণতন্ত্র দু’দেশের দ্ধিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তিশালী ভিত্তি। এ দু’নেতার চিন্তাচেতনাকে ও প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে ভবিষ্যতে দু’দেশ উন্নয়ন ও বাণিজ্যের উর্ধ্বে নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক বিষয়েও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এবং অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার জেনি হকিং মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ও সমসাময়িক বিশ্ব এবং অধ্যাপক জেনি হকিং উন্নয়নশীল বিশ্বের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক স্থাপনে হুইটলামের অবদানের ওপর আলোচনা করেন। শান্তিপূর্ণ ভারতীয় মহাদেশীয় এলাকা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠায় মহান এ দু’নেতার অঙ্গীকারের বিষয়ে তাঁরা আলোকপাত করেন। জেনি হকিং স্মরণ করেন কিভাবে জনগণের মঙ্গলার্থে বঙ্গবন্ধু ও হুইটলাম তাঁদের সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু ও হুইটলামের স্বপ্ন ও দূরদর্শিতা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিবিধ সংস্কার ও অবদানের কথা উল্লেখ করে হাইকমিশনার সুফিউর রহমান এ মহান দু’নেতার বিষয়ে ও বাংলাদেশ বিষয়ে অধিক অধ্যয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এসময় প্যানেল আলোচনায় আলোচকগণ এ দু’নেতার চিন্তা ও দুরদর্শিতার প্রশংসা করে বলেন, এ দু্ই বিশ্বনেতা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যোগ ও নীতি গ্রহণ করেন। বিভিন্ন দেশের পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন, শান্তি ও মঙ্গল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ও দু’নেতার প্রয়াসের ওপর তাঁরা আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিডনিতে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মাসুদুল আলম।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/পিটি-১৪