সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের সাবেক দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে দাপট খাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পদোন্নতি পেয়ে বদলি হওয়া তিন শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবি ও প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছেন তারা- এমন অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযুক্তরা হচ্ছেন- সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈকত চন্দ রিমি (৩৫) এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. তাওহীদ ইসলাম (২৭)। তারা দুজনই সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। এর মধ্যে সৈকত চন্দ নেত্রকোনা জেলার নেত্রকোনা সদর থানার কাটলি গ্রামের ডা. নির্মল চন্দ্র চন্দের ছেলে ও তাওহীদ পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার আমিরাবাদ গ্রামের মোসলেম উদ্দিন শিকদারের ছেলে।


বহিরাগত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির একটি হোস্টেল দখল করে আধিপত্য বিস্তারের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া ইনস্টিটিউটের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে টেন্ডারবাজির পাশাপাশি চাঁদাও দাবি করেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দক্ষিণ সুরমা থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্রসহ বহিরাগত অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, সৈকত চন্দ ও তাওহীদ প্রাক্তন শিক্ষার্থী হয়েও সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অজ্ঞাতনামা ছাত্র ও বহিরাগতদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সুরমা আবাসিক হোস্টেল দখল করে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ইনস্টিটিউটের প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করছিলেন।

এদিকে, গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন পলিটেকটিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষক অমল কৃষ্ণ চক্রবর্তী, মো. মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী ও মো. গোলাম কিবরিয়াকে পদোন্নতি প্রদান করে বিভিন্ন স্থানে পদায়ন করা হয়। শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বদলির খবর পাওয়ার পর ওই তিনজের কাছে চাঁদা দাবি করেন সৈকত চন্দ ও তাওহীদ। শিক্ষকরা এতে সম্মত না হলে তাদের আদেশ বাতিলের দাবি নিয়ে গত বুধবার বেলা পৌনে একটার দিকে সৈকত চন্দ ও তাওহীদ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও বহিরাগত ৪০-৫০ জনকে নিয়ে দুই দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে যান।

এসময় অধ্যক্ষ তাদের জানান, বিষয়টিতে তার হাত নেই। বোর্ডের অধীনে ৩ শিক্ষকের পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছে। এসময় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন এবং অভিযুক্তরা বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে পদোন্নতি ও পদায়নপ্রাপ্ত শিক্ষক অমল কৃষ্ণ চক্রবর্তীকে আটকে রেখে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফয়সল মুফতির কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

খবর পেয়ে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রিহান উদ্দিন ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলমসহ অন্য শিক্ষকেরা অমল কৃষ্ণ চক্রবর্তীকে উদ্ধার করতে গেলে সৈকত চন্দ ও তাওহীদ তাদের গালিগালাজ করেন। এতে শিক্ষকেরা প্রতিবাদ করলে সৈকত চন্দ ও তাওহীদ এবং তাদের সহযোগিরা কয়েকটি মোটারসাইকেল ভাঙচুর করেন।

ওইদিন দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যালয় ও ক্যাম্পাসে প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার একদল পুলিশকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ব্যাপারে জানতে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও মামলার বাদি মো. মাহবুবুল আলমের মুঠোফোনে শুক্রবার সন্ধ্যারাতে কল দিলে তিনি সিলেটভিউ-কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা এমপি মহোদয়ের বাসায় যাচ্ছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।

দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালুকদার শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে সিলেটভিউ-কে বলেন, বুধবার দিনের বেলা সৈকত চন্দ ও তাওহীদের নেতৃত্বে একদল উশৃঙ্খল ছাত্র ও বহিরাগত শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে আমাদের খবর দিলে আমরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। ওইদিন রাতেই ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন আবাসিক হলে তল্লাশি চালাই, কিন্তু অভিযুক্তদের পাইনি।

তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্তদের আমরা খুঁজতেছি। আশার করি তারা দ্রুত গ্রেফতার হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম