নগরীর বিভিন্নস্থানে এভাবেই রাইডারদের অবস্থান

মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছেন এক রাইডার। অবস্থান করেছেন শাহজালাল ব্রিজের দক্ষিণ পাশের ছোট ব্রিজে। একই স্থানে রয়েছে আরো কয়েকটি মোটরসাইকেল। বাইকের মালিকরা সকলেই রাইডার। অনেকের আবার কোনো কোম্পানির সাথে চুক্তি নেই। তারা অ্যাপে বিশ্বাসী নন; তারা নিজে থেকেই রাইড করেন। তারা নগরীতে যাত্রী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান খেপের নেশায়। কন্ট্রাক্ট করে যাত্রী নিয়ে যান বিভিন্ন স্থানে।

এদের মধ্যে ২-৩ জন রয়েছেন অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং উবার কোম্পানির চালক। পূর্ব জিন্দবাজার যেতে আগ্রহী এক যাত্রী তার সাথে কথা বলছেন। যাত্রী আলমগীর অ্যাপের হিসেবে টাকা দিতে চাইলেও উবার কোম্পানীর ওই চালক অ্যাপের হিসেবে নয়; তিনি তাকে ম্যানেজ করতে চাচ্ছেন কন্ট্রাক্টে নিয়ে যেতে। অর্থাৎ যাত্রী অ্যাপে যেতে চাইলেও চালক চান খেপে যেতে!  


কারণ হিসেবে জানা গেলো-শাহজালাল ব্রিজের উপর থেকে পূর্ব জিন্দাবাজার ওই রাইডার তার কাছে ভাড়া দাবি করেছেন ৭০ টাকা। যেখানে লোকাল সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা। আর রিকশাভাড়া ৪০ টাকা।  ওই রাইডারের পাশে আরো কয়েকজন রাইডার রয়েছেন-তাদের মতামতও একই। কেউই ৭০ টাকার নিচে পূর্ব জিন্দাবাজার যাবেন না। পরে যাত্রী আলমগীর ১০ টাকা ভাড়ায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলে আসেন বন্দরবাজারে।  

এখানে লক্ষ্য করা গেছে, শাহজালাল ব্রিজের দক্ষিণ পাশের ছোট ব্রিজের উপরে ও হুমায়ুন রশীদ চত্বরে প্রায় ৬০-৭০টি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রাইডাররা। তারা কেউই অ্যাপে যাত্রী নিয়ে যেতে আগ্রহী নন। তাদের মূল টার্গেট খেপ। একই অবস্থা নগরীর সবকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে।

জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্ট, শিবগঞ্জ, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মদিনা মার্কেট, টিলাগড়, দক্ষিণ সুরমার কদমতলী, হুমায়ুন রশীদ চত্বর ঘুরে একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। ওই সকল রাইডারদের মোটরসাইলে পার্কিং করার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় তারা যত্রতত্র মোটরসাইকেল পার্কিং করেন।      

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখন উবারের রাইডাররা রাস্তায় যাত্রী বহন করলেও পাঠাও কোম্পানীর রাইডারদের আপাতত পাওয়া যায় খুব কমই। কারণ সিলেটের বেশিরভাগ রাইডাররাই এখন ব্যক্তিগতভাবে রাইড করে যাত্রী নেন কন্ট্রাক্টে।  
 
সিলেট নগরীর প্রতি মোড়েই মোটরসাইকেল নিয়ে চালকরা যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দরদাম করার পর ভাড়া মিটিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন তারা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেখান-সেখান থেকে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন এসব রাইডাররা।

নগরীর ব্যস্ততম এলাকা বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যাবে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল জটলা করে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ মনে করেন এগুলো হয়তো মিছিল-সমাবেশে যাওয়ার জন্য সারিবদ্ধভাবে রাখা মোটরসাইকেলের বহর। তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীকে রাইডাররা ডেকে বলেন, 'ভাই কোন জাগাত জাইতা।'  

সূত্রমতে, দেশে ২০১৬ সালে অ্যাপসভিত্তিক গাড়ি শেয়ারিং সার্ভিস 'উবার' ও 'পাঠাও'-এর কার্যক্রম শুরু হয়। সিলেটে শুরু হয় পরের বছর থেকে। এরপর থেকে সড়কে যানজট এড়িয়ে দ্রুত ও সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অ্যাপসভিত্তিক এই রাইড শেয়ারিং।

নাম প্রকাশ না করে শর্তে ট্রাফিক বিভেগের এক সার্জেন্ট বলেন, মোটরসাইকেল ওয়ালাদের কিছু বলা যায় না। তারা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। রিকশাচালকদের শাস্তি হিসেবে চাকার হাওয়া ছেড়ে দিলেও তাদের ক্ষেত্রে কিছু করা যায় না।

তিনি বলেন, এসব রাইডারদের বেশিরভাগ এখন ব্যক্তিগত বাইক দিয়ে যাত্রী বহন করেন।

এদিকে, সিলেটে উবার চালক রেদওয়ান রশীদ চৌধুরী সৌরভ (৩০) কে গতবছরের ১৫ মে হত্যা করা হয়। তার লাশ উদ্ধার করা হয় ডুবা থেকে।  

সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ সিলেটভিউকে বলেন, বর্তমানে যারা বাইক রাইড করছেন তারা সকলেই উবারের রাইডার নন; এমনটি আমাদের নজরে এসেছে। এক্ষেত্রে আমরা যদি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানীর চালক ব্যতীত কোনো রাইডারকে যাত্রী বহনে পাই তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথে আইনি ব্যবস্থা নেবো।  

তিনি বলেন, গত বছরের মে মাসে সৌরভ নামের একজন উবার চালক ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পাশাাপাশি খুন হয়েছেন। সৌরভ অ্যাপভিত্তিক রাইডার থাকায়, তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের সহজে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। অ্যাপের বাইরে যারা রাইড করেন তাদের বেলা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আসামি শনাক্ত করা ডিফিকাল্ট হবে।  

নিশারুল আরিফ বলেন, যারা নগরীতে রাইডিংয়ের নামে বাইক নিয়ে যত্রতত্র অবস্থান করছেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ট্রাফিক বিভাগ ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শিপু/০৩