সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছেই। গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা থেকে এই অনশন শুরু করেছেন ২৪ শিক্ষার্থী। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ২০ ঘন্টা। তারা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

কনকনে শীতের রাতেও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে সরেননি অনশনকারীরা।


অনশনকারীদের সমর্থন ও সাহস জোগাতে আরও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের সাথে অবস্থান করছেন।

এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহমর্মিতা জানাতে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষসহ প্রায় দুইশ’ শিক্ষক সেখানে যান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁদেরকে কথা বলার সুযোগ দেননি। তারা দাবি করেন, যদি শিক্ষকরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন, তবেই তাঁরা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

জানা গেছে, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। গত শনিবার আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের প্রভোস্টের অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে পরদিন রবিবার সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে অ্যাকশনে যায় পুলিশ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ। এতে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে উত্তুঙ্গে ওঠে আন্দোলন।

এদিকে, গত রবিবার পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে তিনশ’ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সোমবার রাতে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুঁড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলা প্রত্যাহার হয়নি।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল শাবি ক্যাম্পাস। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে দিনভর মুখর ছিল ক্যাম্পাস। এ সময় কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সিসিক কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান।

ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্যাম্পাসে যান। তাঁরা উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না পেয়ে আন্দোলন থেকে সরার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছেন।

এদিকে, মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বুধবার দুপুর ১২টা অবধি সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করায় পূর্বঘোষণা অনুসারে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে