ছবি: শাহীন আহমদ।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ৩টা থেকে ২৪ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। এরপর কনকনে শীতের রাত পেরিয়ে এসেছে নতুন দিন। কিন্তু অনশনকারীরা অনড়। না খেয়ে থাকা আর শীতের কারণে অনশনরত শিক্ষার্থীরা এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার শাবি ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আগের মতোই অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত রয়েছেন।


আন্দোলনরতরা জানান, যারা অনশনে রয়েছেন, তাদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যে অন্তত চারজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি। পরে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে বৃহস্পতিবার সকালে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসককে নিয়ে আসেন। মানবিক কারণে তিনি ব্যক্তিগভাবে সাড়ে দেন।

এ চিকিৎসককে অনশনরত অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। জ্বরের কারণে এক ছাত্রীকে বমি করতেও দেখা গেছে।

এর আগে গতরাতে বাংলা বিভাগের মোজাম্মেল হক ও সমাজকর্ম বিভাগের দীপান্বিতা বৃষ্টি নামের দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

অনশনরত শিক্ষার্থী জাহিদুল হাসান অপূর্ব বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব। কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাদের টলাতে পারবে না। শুধু ওয়াশরুমের প্রয়োজন ছাড়া আমরা এই জায়গা থেকে উঠব না। কোনো ধরনের খাবারও গ্রহণ করব না।’

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনশনকারীরা ইতোমধ্যেই দুর্বল হতে শুরু করেছে। চার-পাঁচ অসুস্থ হয়েই গেছে। আমরা ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টার থেকে কোনো সহায়তা পাইনি, অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। আমরা রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারা সরাসরি মানা করে দেন যে, তারা এটার সাথে যুক্ত হবেন না। আমরা মাউন্ট অ্যাডোরায়ও যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা বলে তাদের নাকি রিসোর্স নাই। আমরা ওসমানী হাসপাতালেও ফোন করি, কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, আমরা ভিসির পদত্যাগ চাই। আমরা এই আন্দোলন থামাবো না। যে ভিসির কিচ্ছু যায় আসে না যে, তাঁর শিক্ষার্থীরা মারা গেল নাকি কি হলো। তাঁর কাছে গদিটাই বড় বিষয়।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনশনকারীদের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তবুও উপাচার্য গদি ছাড়ছেন না। এই ২৪ জনের কিছু হলে আরো ২৪ জন আসবে। এরপর আরো ২৪ জন আসবে। দেখি তিনি পদত্যাগ না করে কিভাবে থাকেন।’

জানা গেছে, প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি থাকলেও আন্দোলনরতরা এখন উপাচার্যের পদত্যাগেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য গতকাল বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। গতকাল সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরণ অনশন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।

বুধবার বিকাল ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন ১৫ ছেলে ও ৯ মেয়ে শিক্ষার্থী। অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন- শাহরিয়ার আবেদিন, আবদুল্লাহ আল রাফি, রাকিব, ফয়জুর রহমান, আসিফ ইকবাল, কাজল দাশ, সাদিয়া নওরিন মিথিলা, জান্নাতুল নাইম নিশাত, জাহিদুল ইসলাম, এস এম আহাসান উল্লাহ, আসাদুজ্জামান, মরিয়ম আক্তার, আবু রাকিব হাসানসহ আরও ১৩ জন।

তখন অনশনকারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব। এতে যদি আমাদের মৃত্যু হয় তবে দায়ভার উপাচার্যের ওপরই বর্তাবে।’

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকাল ৪টায় প্রায় আড়াই শ’ শিক্ষকের সঙ্গে জুম মিটিং করেন উপাচার্য। জুম মিটিং শেষে রাত ৮টার দিকে শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের আন্দোলন স্থগিত করার অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বলেন, ‘আগে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে আপনারা একাত্মতা প্রকাশ করুন।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে