জীবন শেষ প্রান্তে এসে নিজের এক চিলতে জমিতে মাথা রেখে ঘুমাতে চান সত্তরোর্ধ্ব লাইলি বেগম। সরকারী সহায়তায় ভূমিহীনদের জমি দেয়ার পর থেকে এই আশা জেগেছে তার মনে। ৫০ বছর ধরেই আছেন বিভিন্ন জনের জমিতে আশ্রিত হয়ে। প্রায় ৫৫ বছর আগে প্রথম বিয়ে হয়েছিল তখন বাবার নামে ভিটা ছিল। ঘর ছিল। আবার দ্বিতীয় বিয়ে হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। স্বামী মারা গেলে আর সেখানে থাকতে পারেন নি। চলে আসেন ভাইদের সংসারে।

এদিকে দিনমজুর ভাইয়েরাও বাবার ভিটা টিকিয়ে রাখতে পারেন নি। ঋণে জর্জরিত হয়ে বিক্রি করে ফেলেন। এরপর থেকে আছেন অন্যের আশ্রয়ে। লাইলি বেগমের বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর ঘরগাঁও গ্রামে।


লাইলি বেগম জানান, প্রথমে পাঁচগাঁও ইউনিয়নের আমিরপুর গ্রামে বিয়ে হয়েছিল। এ ঘরে এক ছেলের জন্ম হয়েছিল। ওই স্বামীর ঘরে বেশি দিন থাকতে পারেন নি। চলে আসেন বাবার বাড়ি। পরে আবার বিয়ে হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। সে ঘরে এক মেয়ের জন্ম দেন লাইলি বেগম। যখন তার প্রথম বিয়ে হয় তখন তাদের পিতার নিজের জমি ছিল। ঘরও ছিল। কিন্তু ভাইয়েরা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ায় তা বিক্রি করে দিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েন। এর পর থেকে ভাইয়েরাও অন্যের জমিতে ঘর বানিয়ে থাকছেন। একসময় ভাইদের সঙ্গে থাকলেও ৩৫-৪০ বছর থেকে তাদের সাথেও নেই। ছেলে বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকে শ্বশুর বাড়ি। ঈদ-পর্বনে মনে চাইলে খোঁজ নেয়।

তিনি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর হতভাগিনী লাইলি বেগম যে মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছিলেন সেই মেয়েই এখন তার বাঁচার অবলম্বন। এই মেয়েই অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তা দিয়েই কোন মতে তাদের চুলোয় আগুন জ¦লে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সে স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়া মায়ের সাথেই থাকছে। বয়স হয়ে যাওয়ায় তেমন রোজগারও করতে পারেনা। মেয়ে রছনা বেগমের ঘরে ১০-১১ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে।

লাইলি বেগম বলেন, মেয়েটি অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় করে তা দিয়ে কোন মতে বাঁশ-টিন দিয়ে একটি ঘর বানিয়েছে। এ ঘরেই আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। একটি গরু বর্গা নিয়েছে। সেটির সঙ্গেই আমাদের বসবাস। চারজন মানুষ আর একটি গরু নিয়ে এই ঘরেই তারা থাকছেন। কেউ এমন ঘরে না থাকলে কেমনে বুঝবে আমাদের মতো মানুষের জীবন কেমনে চলে?

লাইলি বেগম আরো বলেন, আমার বাড়ি ৯নং ওয়ার্ডে হলেও ভোট চলে যায় ৮নং ওয়ার্ডে। এ কারণে অনেক সময় সরকারী সুযোগ সুবিধাও পাই না। আর বয়স হয়ে যাওয়ায় সবার কাছে যেতেও পারি না। কেউ মনেও রাখে না। শেষ বয়সে এসে পৌঁছেছি। যেকোন সময়ই মারা যাব। সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে। আমার মতো ভূমিহীন আশ্রয়হীনকে কেউ দেখে না। আশায় আছি হয়তো একদিন সরকারের দেয়া কোন ঘরে মাথাগুজে মারা যাব।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল বলেন, এই মুহুর্তে রাজনগর ইউনিয়নে ঘর বানিয়ে দেয়ার মতো খাসজমি নেই। আমরা এখানে খাসজমির খোঁজ পেলে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে ঘর করে দিতে পারবো। তবে তিনি পাঁচগাঁও বা অন্য কোনো ইউনিয়নে যেতে ইচ্ছুক থাকলে ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এআরএস/এসডি-০৬