করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ধরন ওমিক্রনের দাপটে বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে অনেক। বিশ্বের বহু দেশেই প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগী বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর তাই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রয়োজন ভালো মাস্ক ব্যবহার করা।

তবে ঠিক কোন মাস্ক ভালো? আর কোন মাস্কই বা দেয় সর্বোচ্চ সুরক্ষা? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই প্রশ্নের উত্তর উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে একমাত্র সুরক্ষা দিতে পারে এন৯৫ মাস্ক। তবে করোনা ঠেকাতে ভালো ভূমিকা রয়েছে অন্য মাস্কেরও। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।


করোনার বিরুদ্ধে কেন এন৯৫ মাস্ক বেশি সুরক্ষিত? কী বলছেন গবেষকরা? তারা জানিয়েছেন, কোনো ব্যক্তি যখন ভিড়ের মধ্যে চলাফেরা করেন, অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছেন তখন তার দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা দরকার। আর তাই সেই ধরনের মাস্ক পরে থাকতে হবে যেটি বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে মাস্কটিকে মুখে পুরোপুরি সেট হতে হবে। এসব শর্ত বিবেচনায় সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য এন৯৫ মাস্কের থেকে ভালো কিছু হতে পারে না বলেই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একদল গবেষক।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সম্প্রতি স্বাস্থ্য কর্মীদের কোন ধরনের মাস্ক পরা উচিত সেই বিষয়ে একটা নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সঠিক মাস্ক বেছে নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয়।

সিডিসির মুখপাত্র ক্রিস্টেন নর্ডলন্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের মূল বার্তাটি হলো, সেরা মাস্ক বেছে নিন, সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করুন। আগে সিডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য এন৯৫ মাস্ক সংরক্ষণ করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। কারণ এই ধরনের মাস্কের সরবরাহ সেভাবে হচ্ছে না।

সিডিসি জানিয়েছে, সাধারণ কাপড়ের মাস্কের তুলনায় প্রায় ৯৫% বেশি সংক্রমণ ঠেকাতে পারে এন৯৫ মাস্ক। কারণ এটি বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা নাক-মুখকে অনেক ভালোভাবে সুরক্ষা দেয়। করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে উপযোগী এন৯৫ মাস্ক।

এন৯৫ মাস্ক অন্যান্য দেশে কেএন৯৫ এবং কেএফ৯৪ নামেও পরিচিত। এই ধরনের মাস্ক প্রায়ই পলিপ্রোপিলিনের একাধিক স্তর দিয়ে তৈরি হয়। এসব মাস্কে সাধারণত সিনথেটিক ফাইবার থাকে। এই মাস্কগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, নাকের নিচের অংশ থেকে পুরো মুখকে ঢেকে রাখে। এন৯৫ মাস্ক বাতাসের অন্তত ৯৫ শতাংশ কণা পদার্থকে ফিল্টার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ৩ মাইক্রনের চেয়ে বড় কিছুকে অতিক্রম করতে বাধা দেয়।

কেএন৯৫ ও কেএফ৯৪ যথাক্রমে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এবং এন৯৫ মাস্কের মতো একই সুরক্ষা প্রদান করে। কেএফ মানে ‘কোরিয়ান ফিল্টার’ এবং এটি বাতাসের ৯৪ শতাংশ পরিস্রাবণ করে।

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিবেশগত স্বাস্থ্য এবং প্রকৌশল বিভাগের বিজ্ঞানী এরিক টোনার বলেছেন, ‘সেরা মাস্কগুলো হলো এন৯৫-এর কিছু সংস্করণ। এন৯৫, কেএন৯৫ এবং কেএফ৯৪ একই এবং একইভাবে কাজ করে।’
এছাড়া সিডিসির ওয়েবসাইটে অনুমোদিত এন৯৫ মাস্ক প্রস্তুতকারকদের একটি সম্পূর্ণ তালিকা রয়েছে। আসল মাস্কটিতে অবশ্যই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (এনআইওএসএইচ) এর একটি লোগো এবং একটি অনুমোদন নাম্বার থাকতে হবে। সিডিসি সতর্ক করেছে যে, ২০২০ ও ২০২১ সালে পরীক্ষা করা কেএন৯৫ শ্বাসযন্ত্রের প্রায় ৬০ শতাংশের মানের নিচে।

সিডিসি বলছে, মাস্কগুলো একবার ব্যবহারের জন্য, তবে ঘাটতি থাকলে একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে। এন৯৫ মাস্ক ৫ বারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. গ্রেগরি পোল্যান্ড বলেন, যখন একটি মাস্ক নিঃশ্বাস বা ঘামে ভিজে যায়, তখন তার কার্যকারিতা কমে যায়।

সিডিসির সুপারিশ অনুযায়ী, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার সময় এন৯৫ মাস্ক পরা উচিত। এছাড়াও গণপরিবহন, জনাকীর্ণ জায়গায় বা বাইরে, গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিপূর্ণ চাকরিতে বা গুরুতর অসুস্থতার জন্য, দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণ করার সময় এই মাস্কটি পরিধান করা অত্যন্ত উপকারী।

এন৯৫ ব্যবহার করা সম্ভব না হলে কাপড়ের মাস্কের নিচে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়েছে সিডিসি।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-১৫


সূত্র : ঢাকাপোষ্ট