ছবি : আহমেদ শাহিন

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা টানা ৭ দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলন। প্রথমে তাদের দাবি ছিলো একটি হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের। কিন্তু সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি পর্যন্ত এসে ঠেকে শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন।

সেই দাবিতে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন ২৪ শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই ২৪ জন আছেন মুখে কিছু না দিয়ে। টানা অনশনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এই ২৪ জনের মধ্য থেকে ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১০ জনের শরীরে অনশনস্থলেই স্যালাইন পুশ করা হচ্ছে।


সিলেটভিউ’র শাবিপ্রবি প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, অনশনরতদের মধ্য থেকে অসুস্থ হয়ে পড়া ১০ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসেই স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে এবং দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনশনস্থলে যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা শারীরিক দুর্বলতায় ওঠে বসতে পারছেন না।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কাজল দাস নামের এক শিক্ষার্থীকে নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে তাকে পাঠানো হয়। তিনি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে অনশন করে আসছিলেন তিনি। প্রায় ২১ ঘন্টা না খাওয়া ও তীব্র শীতের কারণে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে তার।

এর আগে বুধবার রাতে বাংলা বিভাগের মোজাম্মেল হক ও সমাজকর্ম বিভাগের দীপান্বিতা বৃষ্টি নামের দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া মরিয়ম নামের এক ছাত্রী বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিশাত নামের আরেক শিক্ষার্থীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা নেওয়া হয়েছে। এই অসুস্থ ৫ জনের মধ্য থেকে বর্তমানে ৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর একজন বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে  বাসায় ফিরেছেন।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব। কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাদের টলাতে পারবে না। শুধু ওয়াশ রুমের প্রয়োজন ছাড়া আমরা এই জায়গা থেকে উঠছি না। কোনো ধরনের খাবারও গ্রহণ করছি না।’

উল্লেখ্য, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। গত শনিবার আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের প্রভোস্টের অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে পরদিন রবিবার সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে অ্যাকশনে যায় পুলিশ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ। এতে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে উত্তুঙ্গে ওঠে আন্দোলন।

এদিকে, গত রবিবার পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে তিনশ’ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুঁড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল শাবি ক্যাম্পাস। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে দিনভর মুখর ছিল ক্যাম্পাস। এ সময় কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সিসিক কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান। ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্যাম্পাসে যান বলে জানান। তাঁরা উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না পেয়ে আন্দোলন থেকে সরার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছে এবং আমরণ অনশনের মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম