সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলছে শিক্ষর্থীদের আন্দোলন। আন্দোলনের একপর্যায়ে গত বুধবার বিকেল থেকে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বেশিরভাগই গত দুদিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে ১২ জনকে।

শাবিপ্রবির চলমান পরিস্থিতি সমাধানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলোচনায় বসতে ঢাকায় যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল।


শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন অন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী সমস্যা সমাধানে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলে তাতে সাড়া দেন তারা।

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ঢাকায় আসতে বলেন। এ সময় প্রতিনিধি দলে কারা থাকবে এবং অন্যান্য প্রস্তুতি শেষ করতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এক ঘণ্টার সময় চান শিক্ষার্থীরা।

পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে ১৯ জানুয়ারি অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। এদিন বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন তারা। তবে একজন শিক্ষার্থীর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তিনি অনশন ভেঙে বাড়ি যান। বাকিদের মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন আর অনশনস্থলে থাকা ১১ জনকে স্যালাইন দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। গত শনিবার আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের প্রভোস্টের অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে পরদিন রবিবার সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে অ্যাকশনে যায় পুলিশ, শিক্ষার্থীদের বাধা প্রদান করেন। এতে সংঘর্ষ হয়। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।

এদিকে, গত রবিবার পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে তিনশ’ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সোমবার রাতে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুঁড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলা প্রত্যাহার হয়নি।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল শাবি ক্যাম্পাস। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে দিনভর মুখর ছিল ক্যাম্পাস। এ সময় কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সিসিক কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান।

ওই দিন ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্যাম্পাসে যান বলে শিক্ষার্থীদের। তাঁরা উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না পেয়ে আন্দোলন থেকে সরার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছেন।

এদিকে, মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বুধবার দুপুর ১২টা অবধি সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করায় পূর্বঘোষণা অনুসারে বুধবার বিকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে দফায় দফায় চেষ্টা করেন শিক্ষকরা। তাঁরা বারবার শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে গেলেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীরা অনশন শুরুর পর বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শতাধিক শিক্ষক কথা বলতে যান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁদের কোনো কথাই শুনতে রাজি হননি এবং অনশনের মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম