সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি হ্যাক করে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেইল করে যাচ্ছে একটি ভয়ংকর চক্র। সেই চক্রের এক সদস্যের ফাঁদে পা দিয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বসেছিলেন সিলেটে বসবাসকারী এক তরুণী। তবে গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় এ যাত্রা বেঁচে যান ভিকটিম। আর পুলিশের জালে আটকা পড়েন ওই হ্যাকার ও ব্ল্যাকমেইল।

সিলেটি এক তরুণীর ফেসবুক হ্যাক করে বার বার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ঢাকায় এক ফেসবুক হ্যাকারকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার (২২ মে) সকালে ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ফেসবুক হ্যাকার মোশারফ হোসেন আকিল (২০) ডেমরা থানার ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারস এলাকার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে। তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।  


মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি) কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে হ্যাকার আকিল ও তার চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

এসএমপি’র উপ-কমিশনার (ডিবি) তোফায়েল আহমদ জানান- আকিল একটি হ্যাকার সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এ চক্র গত এক বছর ধরে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ‘ফিশিং লিংক’র মাধ্যমে ফেসবকু ব্যবহাকারীদের আইডি হ্যাক করে ব্যক্তিগত গোপন তথ্য বা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। তাদের মূল টার্গেট নারীরা। চক্রটির সদস্য আকিল গত এক বছরে অন্ততঃ ২০টি ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছেন। এর মধ্যে সিলেটে বসবাসকারী ঢাকার তরুণীর আইডিও রয়েছে।

ওই তরুণীর ফেসবুক আইডি গত বছরের জুলাইয়ে হ্যাক করেন আকিল। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আইডি’র পাসওয়ার্ড ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এবং ব্যক্তিগত গোপন তথ্য-ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রথমে ৩ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিয়ে নেন এ হ্যাকার। এরপর থেকে এভাবে বেশ কয়েকবার আরও টাকা হাতিয়ে নেন আকিল। কিন্তু ফেসবুক আইডি’র পাসওয়ার্ড ফিরিয়ে দেননি এবং ব্ল্যাক মেইল অব্যাহত রাখেন।

একপর্যায়ে ওই তরুণী অভিভাবকদের কাছে বিষয়টি খুলে বলেন এবং তার বাবা সিলেট কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে হ্যাকার আকিলকে ধরতে গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় অবশেষে সোমবার সকালে ডেমরা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে আকিলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

পুলিশ জানায়- আকিল শিক্ষার্থী। তার বাবার পাঁচ তলা বাড়ি রয়েছে। কিন্তু অল্প বয়সেই লোভে পড়ে সে পা দিয়েছে ক্রাইম জগতে। একবার টাকা না দেওয়ায় ওই তরুণীর আপত্তিকর একটি ছবি ফেসবুক আইডিতে ছেড়েও দেন আকিল। এসময় ভিকটিম আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তবে পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে ওই তরুণীকে কাউন্সিলিং করে।

মঙ্গলবার দুপুরে আকিলকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ প্রেরণ করে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। ওই আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে দেওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত্তিতে আকিলের সহযোগিদের গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা চালাবে পুলিশ।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম