ছাতকে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হতে চলেছে গোবিন্দগঞ্জ-বিনন্দপুর সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজালাবাদ এবং দোলারবাজার ইউনিয়নের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া বটের খাল নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যেই বহু বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের অনেক জায়গা ভেঙে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যে কোন মুহুর্তে সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভুক্তভোগী এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন দিয়েও কোন ফল হয় নি। সম্প্রতী নদী ভাঙনের ভয়াবহতায় শংকিত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ।

বর্তমানে সড়কের একটি বিশাল অংশের পাকা ভয়াবহভাবে ঝুলে আছে। নদীর তীর সংলগ্ন একটি পাড়ায় বসবাসকৃত মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন ইতোমধ্যেই বসতভিটা হারিয়েছেন। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়ক গিলে খেয়েছে  বটেরখাল নদী। ফসলি জমি, অগনিত বাঁশ ঝাড় ও গাছ-গাছড়া ইতোমধ্যেই চলে গেছে নদী গর্ভে। নদী ভাঙনে হুমকীর মুখে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শতাধিক পাকা-আধাপাকা বাড়ি, মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থাপনা।


এছাড়া আন্তঃইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কের আরও প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার প্রহর গুনছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে অন্তত ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে যাতায়াতের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

স্থানীয়রা জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মুখ থেকে বিনোদনগর পর্যন্ত পাকা সড়ক দিয়ে এলাকার ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। এ সড়ক অন্যান্য সড়কের সাথে সংযুক্ত হয়ে উপজেলা সদর, জেলা ও বিভাগের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে গোবিন্দগঞ্জ বাজার ও সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভটেরখাল নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদী শান্ত থাকলেও বর্ষায় ভটেরখাল নদী ভয়াবহ রূপ ধারন করে। ভটেরখাল নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে গোবিন্দগঞ্জ বাজার সহ গোবিন্দনগর গ্রাম। সড়ক সংলগ্ন নদীর তীর এলাকায় যুগ-যুগ ধরে বসবাসরত মুচি সম্প্রদায়ের বসতভিটা কেড়ে নিয়েছে ভটেরখাল নদী।


হাফিজ আব্দুল গণি তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এলাকার বাসিন্দা জগদিশ চন্দ্র দত্ত জানান, জনস্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কারের প্রয়োজন। গোবিন্দনগর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, গোবিন্দনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরও কয়েকশ’ ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও এলাকার হাজার-হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করছেন এই সড়ক দিয়ে। বর্তমানে নদী ভাঙনে মারাত্মক হুমকীর মুখে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় হ গোবিন্দনগর গ্রাম।

গোবিন্দনগর গ্রামের মুজিবুর রহমান বললেন, বর্তমানে যেখানে নদী দেখা যাচ্ছে, সেখানে আগে ছিল এলাকার মানুষের ফসলি জমি, বসতঘর ও গাছ-গাছড়া। ভাঙন রোধ না করলে, গোটা এলাকা এক সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

গোবিন্দনগর মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু সালেহ জানান, নদী ভাঙনে হুমকীর মুখে পড়েছে গোবিন্দনগর মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কের বিভিন্ন অংশের নীচের মাটি সরে গেছে। বিপদজনক অবস্থায় এই সড়ক দিয়ে এখন যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সড়কটি রক্ষা করা হলেই মাদ্রাসা, স্কুল সহ গোটা এলাকা রক্ষা হবে।

ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল বলেন, ভটেরখাল নদীর ভাঙনে ভিটে-মাটি হারা মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রায় অর্ধ কি.মি. পাকা সড়ক চলে গেছে নদী গর্ভে আরও প্রায় অর্ধ কি.মি. সড়ক বিলীন হওয়ার উপক্রম। নদী ভাঙন রোধ করা না হলে এলাকার ভয়াবহ ক্ষতি সাধন হতে পারে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ মাহি