ছবি : রুবেল মিয়া

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া, সবজির বাজার চড়া, সেই সঙ্গে মাছ, গরু ও মুরগির মাংসের দামও সাধ্যের বাহিরে। ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে কিছুতেই হিসাব মিলাতে পরছেন না মহানগরবাসী। কিছুতেই যেন স্বস্তি নেই। দাম কমারও কোনো সুখবর নেই। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ।


ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর তেল, পেয়াজ, চিনি, চাল, ডাল, সবজিসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। সবজির দামও বাড়ছে হু হু করে। সংসারে ব্যয় দ্বিগুণ হলেও আয় বাড়েনি। এমন অবস্থায় সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। 


 

আর বিক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণ জানানেই তাদের। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় কারণ কে দায়ী করছেন অনেকে।

 

শুক্রবার (২৬ মে) মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় সবকিছুর দাম বাড়তি। ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। 

 

বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বেগুন ৫০, ঝিঙে ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, কপি ৩০ টাকা, টমেটো কেজি ৬০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া (ফাঁলি) ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

অন্যদিকে, গাজর প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১৮০-২০০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১২০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার পিস ১২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লেবু ২০ টাকা, এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শাক-সবজির এমন ঊর্ধ্বধমুখী প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। 

বন্দরবাজের বাজার করতে আসা অরুপ লাল বলেন, মাছ মাংসের দাম তো এগেথেকেই বেশি। কিন্তু শাক-সবজির দামও এভাবে বাড়বে চিন্তার বাহিরে। ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নেই। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ, কিন্তু এরপরও এত দাম সবজির। আমরা কোথায় যাবো।

 

আরেক ক্রেতা মনির বলেন, বাজারে এসে তো মাথা ঘুরাচ্ছে রীতিমতো। সবজির দাম দেখে আধা কেজি, আড়াইশ গ্রাম করে সবজি কেনা লাগছে। যেই সবজির দাম করছি সেটাই দাম, কম দামে কোনো সবজি নেই বাজারে। এত দাম হলে আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ তো সবজিও কিনতে পারবো না।

 

একই অবস্থ মাছ, গরু ও মুরগির মাংসের বাজারে। আমিষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

 

দুইমাস আগেও ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে যে ব্রয়লার মুরগি কেনা যেতো এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২১০ টাকায়। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে আরো বেশি। লাল মুরগি গত সপ্তাহে ৬৫০ টাকা থকলেও এই সপ্তাহে হয়েছে ৬৮০ টাকা। এক কেজি সোনালী মুরগি কিনতে লাগছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ২৮০ টাকা। দেশি মুরগির দর উঠেছে ৫৫০ টাকা কেজি।


অন্যদিকে, কিছু দিনের ব্যবধানে ১০৫০ টাকার খাসির মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে ১,০৭০ থেকে ১০৮০ টাকা। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৭০ টাকা কেজিতে।

মাংসের পাশাপাশি মুরগির ডিমের দামও এখন বাড়তি। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর হাঁসের ডিমের হালি ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

এদিকে, বাজারে রুইমাছ প্রতি কেজি ২২০-৩৮০ টাকা, কাতলা ৩৮০-৪২০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০-২২০ টাকা, মৃগেল ৩২০-৩৫০ টাকা, কার্প ২৫০-৩০০ টাকা, ইলিশ বড় ৪০০০ টাকা, মলা ৪৫০-৫০০ টাকা, শিং ২৪০-৩৫০ টাকা, পাবদা ৩০০-৩৫০ টাকা, টেংরা ৬০০-৮০০ টাকা, গ্রাস কার্প ৩৫০-৩৮০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০-২০০ টাকা, পাবদা ৩০০-৩৮০ টাকা, মাগুর ৫০০-৫৫০ টাকা, মৃগেল ৩২০-৩৫০ টাকা, বোয়াল ৭০০-৮০০ টাকা, এবং কই মাছ ২০০-২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

জুনেদ নামের এক ক্রেতা জানান, ব্রয়লারের দাম বেড়েছে তো বেড়েছেই। আর কমার নাম নেই। ১৮০ টাকা কেজি দরে কিনেছিলাম কিছুদিন আগে। আজ এসে দেখি ২০০ টাকা। এটাই ম্যাজিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।

 

গরুর মাংস কিনতে আসা সবুজ নামের এক ক্রেতা জানান, গরুর মাংসের দাম শুনে পকেটের দিকে তাকাচ্ছি। কিনবো কি না দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছি। এত দাম দিয়ে কিনলে অন্য বাজার করতে পারবে না।

প্রবীন দাস বলেন, ইলিশ মাছ কিনতে চাচ্ছিলাম। দাম শুনে তো মাথা ঘরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। বাজার পুরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।


বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুইমাস আগেও ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে যে ব্রয়লার মুরগি কেনা যেতো এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। বাজর আমাদের নিয়ন্ত্রনে নেই। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তে পরে। মূলত ব্রয়লারের বাজার সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ায় দাম কমছে না।

 

মাংস বিক্রেতা বলছেন, গত মাসের চেয়ে মাংসের দাম কিছুটা বেড়ছে। মাংসের দাম শিগগিরই কমছে না। দাম বাড়ায় আমরাও অস্বস্থিতে আছি। তবে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। 

অন্যদিকে, মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন মাছের দাম নাগালের মধ্যেই আছে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/রুবেল/নাজাত