একটা সময় শোনা যেতো, বার্সেলোনাতেই ক্যারিয়ার শেষ করবেন লিওনেল মেসি। কিন্তু ২০২১ সালে এসে অর্থনৈতিক ক্রাইসিসে পড়ে যায় বার্সা। যার ফলে কিছু খেলোয়াড়ের বেতন কমানো, কিছু খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে হয় বার্সা কর্তৃপক্ষকে।
 

ওই সময় এসে লিওনেল মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে গিয়েই বাধে ঝামেলা। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে মেসিকে ধরে রাখতে পারেনি কাতালান ক্লাবটি। মেসি তখন নিজের পারিশ্রমিক কমানোর কথা বলেও থাকতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত চোখের জলে মুখ ভাসিয়ে ন্যু ক্যাম্পকে বিদায় বলেন।


তবে, প্যারিসের ক্লাব পিএসজিতে যোগ দিলেও মেসি তখন থেকেই ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছিলেন, আবারও বার্সায় ফিরে যাবেন। বার্সার পক্ষ থেকেও বারবার বলা হচ্ছিলো মেসিকে ফিরিয়ে আনার কথা। এ জন্য কোচ হিসেবে জাভিকে নিয়োগ দেন বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা।
 

তবে মেসিকে ফিরিয়ে আনতে হলেও যে অর্থনৈতিক বাধা লা লিগার পক্ষ থেকে বার্সার ওপর ছিল, তা একটি বড় প্রতিন্ধকতা হিসেবে কাজ করছিলো। যে কারণে, মেসিকে ফেরাতে লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছে ছাড় ছেয়ে একটি ফাইনান্সিয়াল ভায়াবলিটি প্ল্যান পেশ করে বার্সা। শেষ পর্যন্ত ওই প্ল্যান পাশও হয়ে যায়।

এরই মধ্যে মেসিকে কিনতে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়ে যায় সৌদি ক্লাব আল হিলাল। দুই বছরে এই অর্থ পাবেন মেসি। স্বপ্নেও যে অর্থের কল্পনা করা যায় না, সেটা দিতে রাজি সৌদি ক্লাব আল হিলাল। মেসিও এক সময় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সৌদি আরবের লিগেই পাড়ি জমাবেন।
 

কিন্তু লা লিগা কর্তৃপক্ষ ফাইনান্সিয়াল ভায়াবলিটি প্ল্যান পাশ করার পরই মেসি নিজ মুখে বার্সায় যাওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। ওই সময় আল হিলালকে অন্তত এক বছরের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন।

কিন্তু বার্সা কোচ জাভির পক্ষ থেকে কিংবা বার্সা প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তার পক্ষ থেকে মেসিকে ফেরানোর কথা বলা হলেও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব তারা মেসিকে দিচ্ছিলো না। এমনকি মেসি চাচ্ছিলেন, বার্সার ফুটবলার হিসেবে রেজিস্টার হবেন- তার একটা গ্যারান্টি। বার্সার পক্ষ থেকেও একটা গ্যারান্টি পেলেও তিনি ন্যু ক্যাম্পে ফিরে যেতেন।

অর্থনৈতিক জটিলতার কথা বলে বার্সা প্রস্তাব সামনে রাখলেও গ্যারান্টি দিতে পারছিলো না। এমনকি কবে গ্যারান্টি দেবে- তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। বলা হচ্ছিল, আগস্টের আগে এই গ্যারান্টি পাওয়ার নিশ্চয়তাও নেই।
 

এ সম্পর্কে মেসি নিজেই কথা বলেছেন। মুন্ডো দেপোর্তিভোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘আমি সত্যিই বার্সায় ফিরতে চেয়েছিলাম, আমার সে স্বপ্ন ছিল; কিন্তু দুই বছর আগে আমার বার্সা ছাড়ার সময় যে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো, এরপর আমি আমার ভবিষ্যৎ অন্য কারো হাতে রেখে আবার একই পরিস্থিতিতে পড়তে চাইনি। আমি আমার এবং আমার পরিবারের কথা ভেবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম।’

পিএসজি ছেড়ে ইউরোপের কোনো ক্লাবে খেললে সেটা বার্সায় খেলবেন, এমন সিদ্ধান্ত ছিল মেসির। যদিও অনেক ইউরোপিয়ান ক্লাবই তাকে পেতে চেয়েছিলো। মেসি বলেন, ‘এটা সত্যি যে, আমার কাছে ইউরোপের অন্য ক্লাব থেকেও প্রস্তাব আছে; কিন্তু আমি যে ইউরোপীয় দলটিতে যেতে চেয়েছিলাম, তা হল এফসি বার্সেলোনা।’
 

আবার মেসির জন্য কিছু খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে হতো বার্সাকে। কারো কারো পারিশ্রমিকও কমিয়ে দিতে হতো। এ বিষয়টাও মানতে পারেননি মেসি। তার জন্য অন্যের ক্ষতি হোক, তিনি তা চাননি। মেসি বলেন, ‘যদিও আমি শুনেছি, বলা হয়েছিল যে লা লিগা সবকিছু মেনে নিয়েছে এবং আমার ফিরে আসার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, তবুও আরও অনেক কিছু করতে হবে। আমি শুনেছি, আমার জন্য বার্সা তাদের কিছু খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে হবে বা বেতন কমাতে হতে পারে। সত্যটা হল, আমার জন্য এমন কিছু হোক তা আমি চাইনি।’

টাকার কথা ভাবলে সৌদি ক্লাব আল হিলালেই যেতেন মেসি। কিন্তু টাকার কথা তিনি ভাবেননি। চেয়েছেন নিরুপদ্রব একটি জীবন। তিনি বলেন, ‘যদি টাকার ব্যাপার হতো তাহলে আমি আরবে বা অন্য কোথাও যেতে পারতাম। এটি আমার কাছে অনেক অর্থের মতো মনে হয়েছিল এবং সত্য হল যে আমার সিদ্ধান্ত অন্য কোথাও যায় এবং অর্থের কারণে নয়।’
 

‘আমি এমন একটি মুহূর্তে আছি যেখানে আমি একটু ফোকাস থেকে বেরিয়ে আসতে চাই এবং আমার পরিবার সম্পর্কে আরও ভাবতে চাই। আমি দুই বছর কাটিয়েছি যেখানে (পিএসজি), সেখানে আমি পারিবারিক পর্যায়ে এতটাই খারাপ ছিলাম যে আমি এটি উপভোগ করিনি। আমি আমার পরিবার, আমার সন্তান এবং প্রতিদিনের আনন্দের সাথে আবার দেখা করতে চাই। সে কারণেই বার্সেলোনা ছেয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল কিছুটা।’

তবে, বার্সা এবং মেসি সমর্থকদের একটা কথা, মেসিকে কিনতে চেয়ে সময়ক্ষেপন করেছে বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা। মেসির নাম ব্যবহার করে নানা সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসেছ্নে তিনি। আবার কোচ হিসেবে জাভিকে নিয়োগ দিয়ে তার ওপরও অনেক কিছু ছাপিয়ে দিয়ে নিজে রক্ষা পেতে চেষ্টা করেছেন।
 

মেসিকে নেওয়ার উদগ্র বাসনা থাকলে তাকে কেন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হলো না, কেন তাকে অন্তত রেজিস্ট্রেশনের গ্যারান্টি দেয়া হলো না? মূলতঃ এসবই লাপোর্তার ভন্ডামি এবং নষ্ট রাজনীতি। যার বলি বানানোর চেষ্টা হয়েছিলো মেসিকে। হয়তো মেসি এটা বুঝতে পেরেই দ্রুত মিয়ামিতে নাম লিখিয়ে ফেলেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-১৭২


সূত্র : জাগোনিউজ