মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। এদিক-সেদিক তাকালেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে দেহাংশ। দুর্গন্ধে ভারী এলাকার বাতাস। করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃতদের দেহ রাখার অস্থায়ী স্থান বাহানাগা হাইস্কুল নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন সমস্যা।
 

শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শিক্ষার্থী, কেউই আর ওই ভুতুড়ে স্কুলে যেতে রাজি নন। এই নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। চরম সমস্যায় ওড়িশার শিক্ষা দপ্তর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয়দের কুসংস্কার কাটাতে বাহানাগা হাইস্কুলের ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।



গত ২ জুন সন্ধ্যা সাতটার কিছু আগে বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। দ্রুত শুরু হয় উদ্ধারকাজ। দুর্ঘটনাস্থল থেকে শহর অনেকটা দূরে হওয়ায় অস্থায়ী ভাবে মরদেহ রাখার জন্য বেছে নেওয়া হয় বাহানাগা হাইস্কুলকে। স্কুলের বিভিন্ন ঘরে রাখা ছিল মরদেহ।
 

স্বাভাবিকভাবেই সেখানে উঁকি মেরেছিলেন স্থানীয়রা। তাদের মুখে মুখেই এলাকায় স্কুলের পরিস্থিতির কথা ছড়িয়ে যায়। এক এক করে দেহগুলো স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয়েছে নতুন সমস্যা। স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্ধ্যা নামলেই স্কুল চত্বরের দিকে আর কেউ পা বাড়াচ্ছেন না। স্কুলের পাশে যাদের বাড়ি তারাও রাত কাটাচ্ছেন ভয়ে ভয়ে।
 

ভারতীয় গণমাধ্যমকে ওই স্কুলের এক শিক্ষক জানান, তিনি নিজে চোখে স্কুলের বর্তমান অবস্থা দেখে এসেছেন। কিছুতেই আর ওই স্কুলে পা দেবেন না। তার ভাষ্য, এখনও মেঝেতে রক্তের দাগ রয়েছে। এছাড়া স্কুলের ছয়টি ঘরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদের দেহাবশেষ। পাশাপাশি তীব্র গরমে মরদেহগুলোতে পচন ধরায় এখনও বাতাসে কটূ গন্ধ রয়েছে।


বুধবার (৭ জুন) থেকে স্কুলে শুরু হয়েছে সাফাইয়ের কাজ। আর তারপর থেকেই নড়েচড়ে বসেছেন স্থানীয়রা। প্রধান শিক্ষিকার কাছে অভিভাবকরা বলেছেন, ওই স্কুলে কিছুতেই সন্তানদের পাঠাবেন না। পাশাপাশি শিগগিরই স্কুলে পূজা-অর্চনা করে শুদ্ধ করার আবেদনও জানানো হয়েছে।
 

বাহানাগা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রমিলা সোয়াইন জানান, ম্যানেজিং কমিটির তরফে তাকে স্থানীয়দের দাবির বিষয়ে জানানো হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার স্কুল পরিদর্শনে যান জেলাশাসক থেকে শিক্ষা দপ্তরের কর্তারা। সূত্রের খবর, স্কুলটি ভেঙে ফেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাহানাগা হাইস্কুলটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
 

উল্লেখ্য, ১৮ জুন পর্যন্ত ওড়িশার স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি রয়েছে। ১৯ তারিখ খুলবে স্কুল। তার আগেই ‘ভুতুড়ে স্কুল’ নিয়ে এসপার ওসপার চান স্থানীয়রা।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এনটি


সূত্র : ঢাকা পোস্ট