আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু নাসের জাফর উল্লাহ বলেন, ‍“নারী শিক্ষার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ না করলে সভ্যতা তার পূর্ণ অবয়ব প্রকাশ করতে পারে না। বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে নারীদেরকে প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া সময়ের দাবী। এটা শুধু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাওয়ায় নয় বরং দেশ ও সমাজের জন্য অত্যাবশ্যক। সবার এই আকুল প্রত্যাশাকে পূরণের চেষ্টায় এগিয়ে রয়েছে সিলেটের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইমেন্স মডেল কলেজ। যা উক্ত কলেজকে করে তুলেছে অনন্য।”
 

তিনি বুধবার সিলেট শহরের পূর্ব শাহী ইদগাস্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উইমেন্স মডেল কলেজ কর্তৃক আয়োজিত এসএসসি উত্তীর্ণ কৃতি ছাত্রী সংবর্ধনা ও ইএসডি ফাউন্ডেশন অপরাজিতা মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।
 


অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক উইমেন্স মডেল কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আব্দুল ওয়াদুদ তাপাদার তার বক্তব্যে বলেন, “নারীশিক্ষার মশাল হাতে নিয়ে বিগত দশ বছর ধরে কাজ করছে উইমেন্স মডেল কলেজ। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন এক বাংলাদেশের যেখানে নারীরা সমানতালে দেশ ও সমাজের জন্য ভূমিকা রাখবে এবং মর্যাদার অংশীদার হবে। নারীশিক্ষা ছাড়া একটি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। তাই উইমেন্স মডেল কলেজ নারীশিক্ষার অগ্রগতিতে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্নে অবিচল থেকে কাজ করে গেলে একদিন স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবেই।”
 

তিনি এসএসসি ২০২৩ উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রী ও অপরাজিতাদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ গড়বে। তোমাদের নেতৃত্বেই একদিন স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ হবে। একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নিয়মিত অধ্যাবসায় করতে পারলে তোমাদেরকে কেউ আটকাতে পারবে না। সাফল্য ছিনিয়ে আনবেই। তোমাদের জন্য রইলো আমার পক্ষ থেকে একরাশ শুভকামনা ও দোয়া।’

তিনি তার বক্তব্যের সময় সংবর্ধিত ছাত্রীদের প্রশ্ন করে সেরা উত্তরদাতাকে আকর্ষণীয় পুরস্কারে ভূষিত করেন।
 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং কাজী জালাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা: মো: মিফতাহুল হোসেন সুইট বলেন,"স্বনির্ভর ও সুশিক্ষিত হওয়ার হওয়ার জন্য নারীকে অবশ্যই নিজ নিজ জায়গা থেকে চরম আগ্রহী হয়ে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানে মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবার,  সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। উইমেন্স মডেল কলেজকে ধন্যবাদ নারী শিক্ষায় এরকম সাফল্য ও ভূমিকা রাখার জন্য।"
 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হাতিম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুহিব উস সালাম রিজভী বলেন,"উইমেন্স মডেল কলেজের একজন শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে আমি সর্বদা কলেজের সাথে যুক্ত আছি। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি কলেজটি সহপাঠ্য কার্যক্রমে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা সময়ের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি। একই সাথে আমি ইএসডি ফাউন্ডেশনকেও সাধুবাদ জানাবো এরকম একটি চমৎকার ও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য।"
 

উইমেন্স মডেল কলেজের ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক জনাব স্নিগ্ধা চক্রবর্তী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হেলাল হামাম ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক তৌফিকুল ইসলাম রাসেলের সঞ্চালনায় এবং ইএসডি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর আহমদ লস্করের সভাপতিত্বে সকাল ১০ ঘটিকায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে আলোচনা সভা ও অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান এবং দ্বিতীয় পর্বে এসএসসি উত্তীর্ণ কৃতি ছাত্রীদের সংবর্ধনা স্বরূপ ক্রেস্ট প্রদান ও অপরাজিতা মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ২০২৩ এর পুরস্কার বিতরণ।
 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন অত্র কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জনাব সালেহ আহমদ এবং গীতা পাঠ করেন স্কুল শাখার গণিত বিভাগের সহকারি শিক্ষক দেবশ্রী দাস। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অত্র কলেজের সিনিয়র প্রভাষক জনাব মৌসুমী আক্তার খানম। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা মাজেদ আহমেদ চঞ্চল, কাজী জালাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধাব শিক্ষক আব্দুল খালিক এবং আনোয়ারা মতিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিশির সরকার।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ইএসডি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মনসুর আহমদ লস্কর সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিক ইতি টানেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই ইএসডি ফাউন্ডেশন অপরাজিতা মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ২০২৩ এর সেরা দশের হাতে পুরস্কার তোলে দেন অতিথিবৃন্দ। এর আগেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া সকল শিক্ষার্থীদের হাতে প্রশংসাপত্র তোলে দেয়া হয়। এরপর সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত আট শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে সংবর্ধনা স্বরূপ ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিবৃন্দ।
 

অবশেষে অভিভাবক ও সংবর্ধিত ছাত্রীদের হাতে বিশেষ আপ্যায়ন তোলে দেয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটে।


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-২২১