এক.
ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। ক্রমেই ধাবিত হচ্ছে খারাপের দিকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত জুলাই মাসে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। আগস্টের ১৭ দিনে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ৪৫ জনে। জুলাইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের। আগস্টে এ পর্যন্ত (১৭ আগস্ট) মৃত্যু হয়েছে ২০২ জনের।
দুই.
গত ১৭ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৪ হাজার। আর যারা ভর্তি হয়নি তাদের হিসাব এখানে আসেনি। কমপক্ষে দেড়গুণ বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন। অর্থাৎ ৪৪ হাজার হাসপাতালে ভর্তি হলে আরও ৬৬ হাজার বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন- এটা ধরে নেওয়া যায়। এ সংখ্যা নিয়ে বেশি জ্ঞান চর্চার দরকার নেই। ক্ষেত্রবিশেষে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারন, শুধুমাত্র শিশু ও বয়স্ক এবং যারা মুখে খাবার খেতে পারছেন না অথবা আরও জটিলতা রয়েছে শুধু তারাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাই এ মুহূর্তে শুধু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা নয়, শনাক্ত সংখ্যা জানানোর প্রয়োজন। এতে হয়তো সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব নিয়ে আরও প্রশ্ন বাড়বে। হয়তো ক্ষতবিক্ষত হবে সমালোচনায়। কিন্তু সাধারণ জনতা আরও সচেতন হবে। যখন দেখবে এ সংখ্যা আরও ভীতিকর, তখন সচেতন হতে বাধ্যই হবে। যে অবস্থা দেখছি, শুধু সচেতন নয় এখন আতঙ্কিত হওয়ার সময়।
তিন.
এর আগে যে প্রেস রিলিজ দেওয়া হতো সেখানে লেখা হতো গত ২৪ ঘণ্টায় 'এতো জন' হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি নতুন ফরমেটে সেই প্রেস রিলিজটি দেওয়া হচ্ছে। সেখানে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাটিকেই আক্রান্তের ঘরে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ- গত ১৬ আগস্টের ফরমেটটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ২১৪৯ এবং আক্রান্তের ঘরেও ২১৪৯। বেশ কিছুদিন যাবত এভাবেই ডেঙ্গুর খবর জানানো হচ্ছে। এতে করে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশেও বিভ্রান্তি হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে- গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ২১৪৯, যা পুরোপুরি ঠিক নয়। মূলত ২১৪৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর চেয়ে অনেক বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হননি। তাই প্রয়োজন শনাক্ত সংখ্যা। অথবা সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা- হাসপাতালে ভর্তি ও হাসপাতালে বাইরের রোগীসহ।
চার.
এজন্য বেশি জ্ঞান চর্চার প্রয়োজন নেই। একটু পর্যবেক্ষণ করলেই পাওয়া যাবে। করোনার সময় কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হয়েছিল দৈনিক কতজন শনাক্ত হতো এই ভাইরাসে। তাই এ মুহূর্তে উচিত দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু রোগী পজেটিভ শনাক্ত হলে তা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করে দৈনিক প্রকাশ করা। এতে করে এর ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট হবে। যা শনাক্ত হয় তাদের অর্ধেকেরও কম হাসপাতালে ভর্তি হয়। বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধ এবং যাদের প্লাটিলেট অনেক কমে যায় অথবা মুখে কোনো খাবার খেতে পারে না তারাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বেশি। আর যাদের প্লাটিলেট ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিচের দিকে নামতে থাকে এবং মুখে তরল খাবার ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে তারা মূলত বাসা থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে করে ডেঙ্গু আক্রান্তের একটা বড় অংশ শনাক্তের মধ্যে পড়ছে না এবং তাদের সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না। তাই উচিত শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা নয়, ডেঙ্গুরোগীর শনাক্তের সংখ্যা প্রকাশ করা হোক। আমি মনে করি এতে করে সচেতনতা আরও বাড়বে।
লেখক : অনলাইন এডিটর, বাংলাদেশ প্রতিদিন