কিছু কাজ এমন আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়। আবার কিছু কাজ বা স্বভাব এমনও আছে, যেগুলো আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়। নবীজি (সা.) এসব বিষয়ে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আজ আলোচনা করব এমন একটি হাদিস নিয়ে, যেখানে আল্লাহর রাসুল (সা.) কিছু অভ্যাসের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

যে অভ্যাসগুলো মানুষকে আল্লাহর অপছন্দের পাত্র বানিয়ে দেয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, চার ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন—অধিকহারে শপথকারী বিক্রেতা, অহংকারী দরিদ্র, বৃদ্ধ ব্যভিচারী এবং অত্যাচারী শাসক। (নাসায়ি, হাদিস : ২৫৭৬)


অধিকহারে শপথকারী বিক্রেতা
উপরোক্ত হাদিসে অধিক হারে শপথকারী বিক্রেতা বলে বোঝানো হয়েছে মিথ্যা শপথ করে যারা পণ্য বিক্রি করে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ১২১১)

যারা সৎ ব্যবসায়ী তাদের মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন সর্বোচ্চ স্থান দান করবেন। কিন্তু যারা ব্যবসা-বাণিজ্যে অসৎ, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি। একদিন রাসুল (সা.) লোকদের কেনা-বেচায় জড়িত দেখে বলেন, হে ব্যবসায়ী সমপ্রদায়। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিল এবং নিজেদের ঘাড় ও চোখ উঠিয়ে তাঁর দিকে তাকাল। তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাসিক বা গুনাহগাররূপে উঠানো হবে।

কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং সততা ধারণ করে তারা এর ব্যতিক্রম। (তিরমিজি, হাদিস : ১২১০)

কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে মানুষকে জিম্মি করে রাখে। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য গুদামজাত করে দেশজুড়ে হাহাকার সৃষ্টি করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, গুদামজাতকারী ব্যক্তি পাপাচারী। (মুসলিম, হাদিস : ৪০১৪)

অহংকারী দরিদ্র
অহংকার হচ্ছে সব পাপের মূল। একে আরবিতে বলা হয় উম্মুল আমরাজ-‘সব রোগের জননী’। বরং বলা যায়, এ জগতের প্রথম পাপই হচ্ছে অহংকার। অহংকার করে শয়তান অভিশপ্ত হয়েছিল।  ধনী-গরিব, ছোট-বড়, উঁচু-নিচ সবার জন্যই অহংকার করা মারাত্মক অপরাধ।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের উপাস্য এক। সুতরাং যারা পরকালে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে লিপ্ত। স্পষ্ট কথা, তারা যা গোপনে করে তা আল্লাহ জানেন এবং যা প্রকাশ্যে করে তাও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা নাহাল, আয়াত : ২২-২৩ )

কিন্তু দরিদ্র মানুষের অহংকার করা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়। অহংকারের কোনো উপকরণ তার কাছে না থাকার পরও অহংকার জঘন্য অহংকারীর আলামত। যা আল্লাহ পছন্দ করেন না।

বৃদ্ধাবস্থায় ব্যভিচার
বৃদ্ধাবস্থায় ব্যভিচার অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ। এর মানে এই নয় যে যৌবনকালে ব্যভিচার দোষণীয় নয়। বরং ব্যভিচার সর্বাবস্থায়ই মারাত্মক অপরাধ। সাধারণত বৃদ্ধরা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় পরকীয়ার জেরে। তা গড়ে ওঠে সাধারণত প্রতিবেশী, অফিস কলিগ কিংবা পুরনো বন্ধু/বান্ধবীর সঙ্গে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁরা বলেন, হারাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির ১০ জন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া জঘন্য অপরাধ। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০২)

অত্যাচারী শাসক
অত্যাচার মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। এটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শুধু ফাটলই সৃষ্টি করে। গৃহকর্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র প্রধান, কারো জন্যই এটি হালাল নয়। রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/শাদিআচৌ-৩