সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন গ্রামীণ সড়কগুলোর মধ্যে সংস্কারের অভাবে প্রায় ৩০ শতাংশ সড়ক একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী। তাছাড়া গোয়াইনঘাটে সড়কে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন স্থানীরা। উপজেলার উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ বা ৯৬ কিলোমিটার সড়কে প্রয়োজন  জরুরি সংস্কার।

 


সূত্র জানায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)'র গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলীর কর্তব্য অবহেলা ও সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় ২০২২ সালে স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ  সড়কগুলোর সংস্কারকাজ এখনো পর্যন্ত হয়নি। ফলে সবকটি রাস্তার  দুরবস্থার কারণে  চলাচলকারীদের বছরের পর বছর  ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলায় এলজিইডির পাকা সড়ক রয়েছে ২১৫ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। 


তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান জানান, তোয়াকুল ইউনিয়নে সালুটিকর - গোয়াইনঘাট সড়ক হতে বীরকুলি গ্রাম পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, জাঙ্গাইল পূর্ব পাড়া পর্যন্ত ৫০০ মিটার। ফুলতৈলছ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার। তোয়াকুল বাজার থেকে লাকী ও বৌলগ্রাম পর্যন্ত ২ কিলোমিটার। পাইকরাজ দক্ষিণের রাস্তায় ১ কিলোমিটার ও পেকেরখাল গ্রামে আরো ১ কিলোমিটার। 


ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মতে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে যেসব সড়ক তা হলো:
লেঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, লেঙ্গুড়া ইউনিয়নে সালুটিকর - গোয়াইনঘাট রাস্তা থেকে গুরকচি - চিটিংবাড়ী ১ কিলোমিটার। গুরকচি পশ্চিমপার ও শনিরগামের ১ কিলোমিটার। 


ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন জানান,  ফতেহপুর ইউনিয়নে বিন্নাকান্দি - বড়গুল ভায়া গুলনি বস্তি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার। বিন্নাকান্দি গুলনি বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার। ফতেহপুর - বাউরভাগ ভায়া ইসলাম নগর ৪ কিলোমিটার। গুলনি চা-বাগান হতে গুলনী বস্তি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার। সীমার বাজার - রামনগর রাস্তার ২ কিলোমিটার। 
পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নে লাফনাউট - বাঘের সড়ক ৭ কিলোমিটার। আটলিহাই - নাইন্দা ৪ কিলোমিটার। বারহাল- হাজরাই ভায়া পাতলিপুর ৪ কিলোমিটার। বারহাল - খাস মৌজা ২ কিলোমিটার। সারীঘাট - গোয়াইনঘাট সড়ক হতে আটলিহাই ভায়া পোড়াখাই পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার, দিঘিরর পার ২ কিলোমিটার। পাঁচসেউতি - লাউবিল ২ কিলোমিটার ও লাফনাউট গ্রামের ১ কিলোমিটার। 


পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নে জাফলং বাজার থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার। মোহাম্মদপুর কালী নগর ১ কিলোমিটার ও জাফলং নয়াবস্তি ভায়া কান্দুবস্তির সড়কে ১ কিলোমিটার। 


মধ্য জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন জানান, মধ্য জাফলং ইউনিয়নে গোয়াইনঘাট - রাধানগর সড়ক হতে কাপাউরা সড়কের ৩ কিলোমিটার। নয়াগাঙ্গের পার সড়কে ৩ কিলোমিটার। জাফলং চা-বাগানে ১ কিলোমিটার ও সংগ্রামপুঞ্জীতে ১ কিলোমিটার।


গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সুমন জানান, গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নে আহারকান্দি - আমবাড়ী রাস্তায় ২ কিলোমিটার। আলীরগ্রাম ও ফিরিজপুর গ্রামে ২ কিলোমিটার। ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম নিজাম উদ্দিন জানান, ডৌবাড়ী ইউনিয়নে নিহাইন - সাতকুড়ি কান্দি সড়কে ১ কিলোমিটার এবং লংপুর গ্রাম পর্যন্ত ২ কিলোমিটার। 


পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন পারভেজ জানান, পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পন্নগ্রাম সড়কে ১ কিলোমিটার। 


রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন শিহাব জানান, রুস্তুমপুর ইউনিয়নের টেকনাগুল সড়কে ২ কিলোমিটার। নিজধরগ্রাম- বীরমঙ্গল সড়কে ৩ কিলোমিটার। হাদারপার পাতলিকোনা সড়কে ৪ কিলোমিটার।  


শুধু এই সড়কগুলো নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন গোয়াইনঘাট উপজেলার গ্রামীণ সড়কের একটা বড় অংশই বেহাল। এর মধ্যে সংস্কারের অভাবে প্রায় ৩০ শতাংশ সড়ক একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সংস্থার অধীনে থাকা প্রায় ৬০ শতাংশ সড়কেরই মেরামত প্রয়োজন। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গণের সাথে আলাপ করে  এসব তথ্য জানা গেছে। সরকারের জাতীয় সড়ক ব্যবস্থার শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, দেশের সব উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কের একক দায়িত্ব এলজিইডির। আর গোয়াইনঘাট উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও তার টিমের কর্তব্য অবহেলা ও যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে তথ্য বিনিময় না করার  কারণে বন্যা পরবর্তী সময় থেকে এই সড়কগুলো ভাঙাচোরা আছে । এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেন নির্মাণের পর বছর না ঘুরতেই সড়ক ভাঙতে শুরু করে। তা ছাড়া এলজিইডির সড়ক নির্মাণের পর তা বেশি দিন টেকেনা। দু-তিন বছরের মধ্যেই সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। এ কারণে বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কের সুফল মানুষ পায় না। 


এ ব্যাপারে  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের মোবাইল নাম্বার একাধিক বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/মতিন/ইআ-১০