সিলেট মহানগরীতে বেড়েছে ছিন্নমূল পথশিশুর সংখ্যা একই সথে তাদের মাঝে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকের আসক্ততা। যে বয়সে বই-খাতা হাতে নিয়ে পাঠশালায় যাওয়ার কথা সেই বয়সে শিশুরা আসক্ত হচ্ছে নেশাতে। নেশায় আসক্ত অধিকাংশ শিশুদের বয়স ৭ থেকে ১২ বছর। ১৫-২০ জন দলবেঁধে রাতে ঘুমাচ্ছে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, শপিংমল ও দোকানের সামনে। নেশার টাকা জোগাড় করতে অনেকসময় তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। শিশু আইনে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন বিধায় জনসচেতনা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
 

সিলেট মহানগরের ক্বীন ব্রিজ রেলস্টেশন, কাজির বাজার ব্রীজ, তালতলা, জিন্দাবাজার, কৌর্ট পয়েন্টের ওভার ব্রীজ ও চৌহাট্রা এলাকায় দেখা মেলে এসব পথশিশুদের। তাদের অনেকের নেই মা বাবা। এসব শিশুরা কখনো আবর্জনার স্তূপ থেকে প্লাষ্টিক, কাঁচের বোতল, লোহা, ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিস কুড়িয়ে বেড়ায়। নেশার কবলে পড়ে এসব শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে সমাজের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।
 


সকালে আবর্জনার স্তূপ থেকে প্লাস্টিক, কাচের বোতল, লোহাসহ বিভিন্ন জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করে। কেউ কেউ বিকেলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ভিক্ষা করে। সারাদিন এসব করে যে টাকা হাতে পায়, তা দিয়ে মাদক কেনে। চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও নাম আসছে অনেকের।
 

কিন ব্রিজ এলাকার কয়েকজন পথশিশু জানায়, এসম খেলে নাকি মনে কোনো দুঃখ থাকে না, ক্ষুধাও লাগে না বলে জানায়। তবে দোকানিরা আইকা বিক্রি করতে চান না। এ জন্য পথশিশুরা রিকশাচালকের মাধ্যমে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় একটি আইকা কেনে। পরে সবাই মিলে সেটি সেবন করে।
 

চৌহাট্টা এলাকায় কয়েকজন পথশিশু জানায়, তাদের অনেকেরই বাবা-মা নেই। মা রেজিয়া বাসায় কাজ করেন। দিনভর আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়ে ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করে যে টাকা হয়, তা দিয়ে মাদক কেনে। কেউ খাবার কিনে দিলে খায়, না হলে উপোস থাকে বলে জানায় নাদিম।
 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জানান, সিলেটে পথশিশুরা মাদকে আসক্ত হচ্ছে। ইদানিং দেখা গেছে চুরি-ছিনতাইয়ের মত অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে পথ শিশুরা যার ফলে দিন দিন বাড়চ্ছে অপরাধ প্রবণতা। এদের পুনর্বাসনে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে এসব শিশু একদিন সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
 

সিলেট সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রফিক জানান, পথশিশুদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। রাষ্ট্রের একার পক্ষে পথশিশুদের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। সামাজিক সংগঠনসহ সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে পুনর্বাসনে শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে। তাদেরকে ভালো পথে আনার জন্য আমাদের সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টাতে হবে।
 

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, শিশু অধিকার আইনে শাস্তির তেমন ব্যবস্থা না থাকায় পথশিশুরা সহজেই বিপথগামী হচ্ছে। মাদকসহ অপরাধে জড়ানো ঠেকাতে পুলিশ নজরদারি করছে। ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশুরা সাধারণত গাঁজা, সিগারেট, গাম সেবন করে। তবে বেশি আসক্ত মাদকে। পথশিশুদের মাধ্যমে যারা মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় পথশিশুদের সুপথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত /এসডি-৩৪০