‘আমরা গরিব বইলা সরকারে মায়া কইরা ঘর দিসে থাকবার লাইগ্যা, কিন্তু ইখানো থাকার তো কোনো অবস্থা নাই। সামনের গেরামের সব টয়লেটের পানি আমরার ঘরের সামনে জমা অইয়া নালা হইগেছে। ইখানো ময়লা পানি জমা হইয়া থাকে। দুর্গন্ধে বাস করা দায়।’

নিজেদের দুর্ভোগের কথা এভাবেই বলছিলেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর শ্রীধামপুর গ্রাম সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা গোপাল বৈষ্ণব।


উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক শ্রেণিভুক্ত ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ৩০ টি ঘর নির্মাণ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ১৮টি ঘর বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরের শ্রীধামপুর সংলগ্ন ও বাকিগুলো কাকাইলছেও ইউনিয়নের বদরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন। ঘরগুলোতে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি শৌচাগার ও একটি রান্নাঘর। ২০২১ সালের ৩০ জুন  ঘরগুলো উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করেন উপজেলা প্রশাসন।

গোপাল বৈষ্ণব বলেন, নির্মাণের পর সবকিছু ঠিক থাকলেও ২০২২ সালের জুনের বন্যার পানিতে ডুবে যায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরের দুটি সারির মধ্যস্থলে মাটি সরে গিয়ে নালার সৃষ্টি হয়। এখন শ্রীধামপুর গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির শৌচাগারের ময়লা ও পানি সেই নালায় জমা হয়। যার দরুণ সৃষ্টি হয় মারাত্মক দুর্গন্ধের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়ক থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাবার  জন্য কোন রাস্তা নেই। নালার উপরে কয়েকটি বাঁশ দিয়ে তৈরি সাঁকো দিয়ে গ্রামে প্রবেশ করতে হয়। এ ছাড়া দুপাশের সারি সারি ঘরের মধ্যস্থল (উঠোনে) মাটি সরে গিয়ে নালা ও জলাশয়ে রুপান্তরিত হয়েছে। সেই জলাশয় ও নালায় শ্রীধামপুর গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির শৌচাগারের ময়লা ও পানি জমে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে অবিরত ।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা শিল্পী রানী দাস, জয় রাশি দাসসহ বেশ কয়েকজন  জানান, নালার ময়লা পানির দুর্গন্ধে ঘরে বাস করা দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর রোদ উঠলে গন্ধের র্তীরতা বেড়ে যায়। এমনকি ময়লা পানি সারা গ্রামে (আশ্রয়ণ প্রকল্পে) ছড়িয়ে পড়ে। শিশুরা এই পানিতে নেমে চর্মরোগ সহ বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। দুটি নলকুপ থাকলেও একটি বন্যার পর থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যার দরুণ সুপেয় পানির সংকটও রয়েছে। ঘরগুলোতে যে শৌচাগার দেয়া হয়েছে তাতে তিন থেকে চারটি রিং ব্যাবহার করা হয়েছে। যার ফলে সপ্তাহ খানেক শৌচাগার ব্যাবহার করলেই ট্যাংকি ভরাট হয়ে ময়লা বাহিরে ছড়িয়ে পড়ে।

আশ্রয়ণের বয়োবৃদ্ধ বাসিন্দা ঠাকুর মনি সরকার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মায়া করে জায়গাসহ ঘর দিয়েছেন থাকার জন্য। আমরা সেখানে গরু ,হাস , মুরগী পালন করে স্বাবলম্বী হবো সেই সুযোগ নেই। পুর্ব, পশ্চিম,উত্তর কিংবা দক্ষিণ কোনদিকেই আমরা বের হতে পারিনা। গরু বাছুর নিয়ে যেতে পারি না। সবদিকেই নাকি শ্রীধামপুর প্রামের জায়গা। রাস্তার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। এক রকমের অবরুদ্ধ হয়েই বসবাস করছি বলতে পারেন। আমাদের ঘরে আসতে শ্রীধামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ির পিছন দিয়ে আসতে হয়। অধিকাংশ সময়ই তারা বাঁধা দেয়। এমনকি গালমন্দও শুনতে হয় আমাদের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুবোধ মন্ডল বলেন, আমি মাস খানেক পুর্বে এই উপজেলাতে যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, সরজমিনে পরিদর্শন করে সমস্যাগুলো সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/মিলাদ/ডি.আর