সিলেট মহানগরের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক বন্দরবাজার থেকে আম্বরখানা পর্যন্ত রিকশা, ভ্যান ও লেগুনা চলাচল বন্ধ করেছিলো সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ। এ সড়কে যানজট কমিয়ে জনভোগান্তি কমানো এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০২১ সালের শুরু থেকে এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিলো সিসিক।

পাশাপাশি উচ্ছেদ করা হয়েছিলো ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারী সকল হকারও। এমন চলেছিলো কিছুদিন। কিন্তু অবস্থা তথৈবচ! বন্দরবাজার থেকে আম্বরখানা পর্যন্ত ফুটপাত দখল তো করেছেনই হকাররা, প্রতিদিন রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত পণ্য সাজিয়ে বসেন তারা। সেই সঙ্গে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’র মতো এখন বন্দর-জিন্দাবাজার সড়ক পুরোটাই যেন হয়ে গেছে লেগুনা স্ট্যান্ড!


যদিও পুলিশ বলছে- বন্দর-জিন্দাবাজার সড়কে ‘কোনো হকার নেই’। আর লেগুনা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে না রাখতে ‘নিয়মিত অভিযান চালান’ তারা।

সিলেট মহানগরে ২০২০ সালের শেষদিকে রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় সিসিক। প্রাথমিক পর্যায়ে মহানগরের বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা, লেগুনা, ভ্যান ও হাতাগাড়ি চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করে সিসিক। 

ওই সময় সিসিক সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার রিকশা চলাচল করে। ছোট এই নগরে মাত্রাতিরিক্ত এসব রিকশার কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। বিশেষ করে ব্যস্ততম বন্দর-চৌহাট্টা সড়কে যানজট থাকে সবচেয়ে বেশি।

সিসিক ওই সময় আরও জানায়, সম্প্রতি এই সড়ক সম্প্রসারণ করে সৌন্দর্যবর্ধণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই সড়ক ও ফুটপাতের সব হকারদের সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হয়েছে। বন্দর-চৌহাট্টা সড়কটিকে একটি মডেল সড়কে পরিণত করার কাজ চলছে। যেখানে যাত্রী ও পথচারীরা কোনো দুর্ভোগ পোহাবেন না। পর্যটকরাও মুগ্ধ হবেন। এ কারণে রিকশা-ভ্যানগাড়ি-লেগুনা চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

নির্দেশনাটি কার্যকর করতে মাইক দিয়ে প্রচারণা চালায় সিসিক। এ ছাড়া এই সড়কের বিভিন্ন মোড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নির্দেশনার বিষয়টি সর্বসাধারণকে অবগত করা হয়। 

ওই সময় সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন- বন্দর-চৌহাট্টা সড়কটিকে সিলেটের একটি মডেল সড়কে পরিণত করা হচ্ছে। সিলেটের দীর্ঘদিনের নাগরিক দাবি- ফুটপাত হকারমুক্ত করা। কাজটি মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। নগরবাসী এখন ফুটপাতে নির্বিঘ্নে হাঁটার অধিকার ফিরে পেয়েছেন।

এসময় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ছিলেন মো. ফয়সাল মাহমুদ। তিনি সিসিকের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেশ সহযোগিতা করেন। বেশ কিছুদিন বন্দর-চৌহাট্ট-আম্বরখানা সড়কে নিয়মিত অভিযানের ফলে এবং হকারদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তাদের বসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। পাশাপাশি বন্দরবাজার এলাকায় অনেকটা কমেছিলো গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়টি। ফলে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছিলো এই সড়কে চলাচলকারীদের।

তবে ২০২০ সালের নভেম্বরে সিলেট থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রামে চলে যান পুলিশ কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ। সেই সঙ্গে অনিয়মিত হয়ে পড়ে সিসিকের অভিযান। ফলে বন্দর-চৌহাট্ট-আম্বরখানা সড়ক ও ফুটপাত ফের দখল করে নেয় হকাররা, পাশাপাশি বন্দরবাজারের কালেক্টরেট মসজিদ থেকে জিন্দাবাজারের সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ গেট পর্যন্ত কয়েক সারিতে লেগুনা দাঁড় করিয়ে রাখেন চালকরা। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের, পথচারীদের হয় চরম ভোগান্তি। আজ রবিবারও (১ অক্টোবর) দিনভর দেখা গেছে এমন চিত্র। 

এ বিষয়ে এসএমপি উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কসহ মহানগরের সকল সড়ক থেকেই অবৈধ গাড়ি স্ট্যান্ড উচ্ছেদে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি, মামলা দেই, গাড়ি র‍্যাকার করি। তারপরও কিছু গাড়িচালক আইন মানতে শিথিলতা প্রদর্শন করেন। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’

ট্রাফিক উপ-কমিশনার বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কে অবৈধভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়টি স্বীকার করলেও হকার বসার বিষয়টি উড়িয়ে দিলেন এসএমপি’র আরেক উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম)। তিনি রবিবার বিকেলে সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কে এখন আর হকার বসে না।’

যদিও ওই সময়ই বন্দরবাজার থেকে জিন্দাবাজার পর্যন্ত সড়কের দুপাশে প্রায় অর্ধেকজুড়ে এবং ফুটপাত পুরোটাই দখল করে বসেছিলেন শতাধিত হকার।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম